লন্ডনে ‘কারী অস্কার’খ্যাত ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের ১৭তম আসর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী

লন্ডন: বর্ণিল আয়োজনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলোকারী অস্কারখ্যাত ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের ১৭তম অনুষ্ঠান। চোখ ধাঁধানো  আলোকসজ্জা আর উৎসবের আমেজে ভরপুর যে বিকেলটির জন্য ব্রিটেনের কারী প্রেমিকরা অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর, ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের ১৭তম আসর উপলক্ষে ব্রিটেনের কারী ইন্ডাষ্ট্রির সময়ের গল্পে  উচ্ছাসে ভরে উঠা  সেই বিকেলটিই উপভোগ করলেন কারি প্রেমিকরা।

এনাম আলী এমবিই

২৯ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের বাটারসি অভ্যুলেশন পার্কের বিশাল এলাকা জুড়ে সাজানো অস্থায়ী অডিটোরিয়ামে বসে ব্রিটেনের ক্যারী ইন্ডাস্টির প্রেস্টিজিয়াস অনুষ্ঠান ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ড এর বর্ণাঢ্য এই আয়োজন। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিক্রীড়ামিডিয়া, ব্যবসা, রাজনীতিসহ বিভিন্ন পেশার দুই হাজারের বেশী আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে পর্দা উম্মোচন হয় ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ডের।

জনপ্রিয় কমেডিয়ান অভিনেতা অমিদ জেলালি প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। বার্তায় তিনি এনাম আলী এমবিই কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কারী ইন্ডাস্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর প্রচেষ্টা তুলনাহীন। মহামারী করোনার ভয়াল পরিস্থিতে ক্যারী ইন্ডাস্টির মানুষের অবদান স্মরণকরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে কারী ইন্ডাষ্ট্রি এবার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।আমাদের সরকার চায় সেক্টর আরও অনেক অনেক বেশি উন্নতি করুক।   

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ডস কো প্রোডিউসার জেফ্রি আলী।

অমিদ জেলালি

ব্রিটিশ ক্যারী অ্যাওয়ার্ডস প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মহামারী করোনায় বিশ্ব পরিস্থিতি এবং ব্রিটেনের ক্যারী ইন্ডাস্টির সংকটময় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেনলাখো মানুষের মেধা, শ্রম ঘামে গড়ে ওঠা শত বছরের ঐতিহ্যের ফসল ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাস্ট্রি যখন স্টাফ সংকটের কারণে অন্ধকার পথে যাত্রা করছিলো, তখন সংকট নিরসনে সরকারের উদ্যোগে আশার আলোও পেয়েছিলো। কিন্তু করোনার মরণ থাবা যেন সব কিছু ওলোটপালট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের অনবদ্য সৃষ্টি ব্রিটিশ ক্যারী ইন্ডাস্টি শুধু দেশের  জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে না, ইন্ডাস্টি মানবিক বিপর্যয়ে মানবতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে নতুন ইতিহাস তৈরী করেছে।পেন্ডামিকের বিপর্যয়ে মানুষ যখন ছিল গৃহবন্দি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , শিল্প কারখানার চাকাগুলো যখন ছিল শব্দহীন, তখন কারী ইন্ডাস্টির সাথে সংশ্লিষ্ট রেস্টুরেন্ট মালিকরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে লকডাউনের মধ্যে রান্না করা খাবারের প্যাকেট  নিয়ে দৌঁড়েছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। গিয়েছেন অসহায় স্বজন হারাদের কাছে, হাজির হয়েছেন বৃদ্ধ স্বজনসন্তানহীনদের দুয়ারে দুয়ারে। মানবতার শক্তি যে কত দৃঢ় সেটা আমাদের ইন্ডাস্টির মানুষ গুলো প্রমান করেছে এই পেন্ডামিকে।

ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ব্রিটেনের কারী ইন্ডাস্ট্রি এটা  প্রমাণ করেছে যে, এ শিল্প শুধু নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য নয়, মানবিক সংকটেও তারা মানুষের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাড়ায়। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, কারী শিল্পের সংকট মোকাবেলায় আমাদের বিভিন্ন দাবিকে আপনারা সম্মান করেছেন, স্টাফ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে স্টাফ আনার পথ তৈরী করে দিচ্ছেন  বিশ্বব্যাপী করোনার বিপর্যয়ে আমরা নতুন যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছি সে বিপর্যয় কাটাতেও এবার সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।এনাম আলী এমবিই কারী শিল্পের উদ্যোক্তাদের এক এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, পূর্বপুরুষের ঐতিহাসিক সৃষ্টি শিল্পকে বাঁচাতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত একুশ শতকে পৃথিবী যে ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছে সেটা বলতে গেলে ছিল কল্পনাতীত।ব্রিটেন এর থেকে দূরে ছিল না। মরণব্যাধির থাবায় হারিয়েছেন অনেক মানুষ, অসংখ্য প্রিয়জনের চির বিদায় মানষিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে কমিউনিটিকে। জানাঅজানা, চেনাঅচেনা সব স্বজনদের স্মরণ করে তাদের পরিবার পরিজনদের প্রতি আনুষ্ঠানিক সহমর্মিতা প্রকাশ করে ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের ১৭তম এই আসর।

বেদনার কঠিন দিন কাঠিয়ে একটু আনন্দের স্পর্শে জীবনকে কল্পনার রঙিন ভুবনে নিয়ে যেতে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মেলবন্ধনের প্রকাশ ছিলো অনুষ্ঠানে। চমৎকার এবং মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশনায় বিশাল হলভর্তি দর্শকরা হারিয়ে গিয়েছিলেন সীমাহীন মুগ্ধতায়।

অতিথিদের মনজুড়ানো কোরিওগ্রাফি এবং সিলেটি বাউল গানের প্রাণকাড়া সুরের মূর্ছনায় কিছুক্ষন যেন বিশাল মঞ্চটি হয়ে যায় মাটি, নদী আর বাউল সুরের এক চিলতে বাংলাদেশ।    

এবারের আসরে অংশ নেয় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিংহভাগ কারি রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও ছিলো শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানি রেস্তোরা।অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক দফা বিচার কাজ শেষে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার ক্রিস গেইল এমপি, ব্রিটিশ হাই কোর্টের জাজ স্যার আখলাক চৌধুরী কিউসিজাজ স্বপ্নারা খাতুন আইনজীবী ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড যোগানদাতা কারি ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্নসম্ভাবনা সামনে রেখে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে চালু করেন ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড। এই আসরের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পকে তুলে ধরছেন তিনি। অনুষ্ঠানের ফাঁকে সত্যবাণীকে তিনি বলেন, ‘পেছনের ১৬টি আসরের দিকে তাকালে গর্ব করে বলতে পারি, বাংলাদেশ তথা কারি শিল্পের বিকাশে সফলতার পথেই হাঁটছি। যুক্তরাজ্য তথা বিশ্বময় কারি শিল্পের জন্য কিছু একটা করতে পারছি। আমাদের সুখদুঃখ ভাগাভাগি করতে পারছি যুক্তরাজ্যের মূলধারার অর্থনীতিরাজনীতির সঙ্গে।

You might also like