লন্ডনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ এটি ছিল একটি অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশ, প্রায় ৪৫ বছর পর স্কুল জীবনের সহপাঠীদের পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সহপাঠীরা। নুরজাহান মতিন, প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে বিদ্যালয়চত্বরে শেষবারের মতো পা রেখেছিলেন ৪৫ বছর আগে। আর এটিই ছিল সহপাঠীদের মধ্য সর্বশেষ দেখা। তারপর তিনি লন্ডনে চলে আসেন। পরিবার ও মাটির টানে দেশে যাওয়া হলেও দেখা হয়না বন্ধ বান্ধবদের সাথে। কে কোথায় আছে কেউ জানে না, এর মধ্য অনেক পট-পরিবর্তন। সময় গড়িয়েছে অনেক। নাড়ীর টানে ছুঁটে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে। সকালবেলায় চলে আসেন অনুষ্ঠান স্থলে নুরজাহান মতিন। দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর পর তাঁর দেখা হলো সহপাঠী আব্দুল হান্নান এবং আতিকুল ইসলাম সিরাজ এর সঙ্গে। তাঁরা ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আলাপ চলাকালে চোখ থেকে তখনও ঝরছে আনন্দাশ্রু। এমন বেশ কয়েকটি দৃশ্য দেখা যায় বলরুমে।
বলরুমের আবেগময় পরিবেশ ও নেটওয়ার্কিং অন্যরকম একটি পরিবেশ তৈরি করে। একে অন্যকে পেয়ে আনন্দে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারপর সহপাঠীদের অজানা সব প্রশ্ন দিয়ে এভাবে— এত দিন পর দেখা! কেমন যেনো বদলে গেছো, তোর ছেলে মেয়ে বোধ হয় বড় হয়ে গেছে! দেশে কবে গিয়েছ? স্কুলে কি গিয়েছিলে? ছুটির ঘণ্টা কি এখনো আগের মতোই বাজে? ক্লাসরুমে কি এখনো চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা হয়? তোদের কি টিফিনের কথা মনে আছে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকেন প্র্যাক্তনরা। স্কুলের স্মৃতি স্বরণ এবং কৈশোরে ফিরে যাওয়ার গল্প করতে করতে সহপাঠীদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল।
এভাবে পুরো দিনটি বরণ করে নিয়েছে সিলেট শহরতলীর ঐতিহ্যবাহী হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্র্যাক্তন শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিলেতে বসবাসরত প্র্যাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রেটার কামাল বাজার ডেভলাপমেন্ট ট্রাস্ট ইউকে আয়োজন করে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। ২ সেপ্টেম্বর পৃর্ব লন্ডনের ইমপ্রেশন ইভেন্ট ভেন্যুতে সকাল থেকে আসতে থাকেন প্র্যাক্তন শিক্ষার্থীরা। বিলেতের বিভিন্ন শহর থেকে আসেন তাঁরা। কেউ একা এসেছেন, কেউ আবার এসেছেন সপরিবার নিয়ে। দুপুরের মধ্য পুরো বলরুম উপড়ে পড়ে। এ যেনো এক অন্যরকম দৃশ্য। স্মৃতির টানে সবাই জড়ো হোন এক ছাঁদের নিচে। সকাল ১১ থেকে শুরু হওয়া সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে আসা অতিতিদের প্রথমে অভ্যর্থনা ও নেটওয়ার্কিং দিয়ে শুরু হয়। দীর্ঘ বছর পর বাল্যকালের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতেই একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময় শুরু হয়। চলে আলাপচারিতা, পারিবারিক আলাপ, প্রবাসকালীন জীবন ও কর্মস্থলের গল্প। কেউ কেউ ফিরে যান বিদ্যালয় জীবনের মজার স্মৃতির কথায়। এভাবে পুরোনো স্মৃতি নিয়ে মেতে ওঠেন প্র্যাক্তনরা। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে স্মৃতিকাতরময়।
টেমস থেকে বাসীয়া স্লোগান সামনে রেখে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে প্র্যাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেন হলরুমে।পবিত্র কোরআন থেকে সুরা পাঠ ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম পর্ব । পরে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শিকরের টানে -ফিরে দেখা মেগ্যাজিন এর মোড়ক উম্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন বিদ্যালয়ের প্র্যাক্তন শিক্ষার্থী এমদাদুর রাহমান এমদাদ, লোকমান হোসেন, মিসেস রহিমা রহমান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল বাচিত চৌধুরী, আব্দুল আহাদ, বখতিয়ার খান, পারভেজ আহমেদ, মোঃ হাফিজুর রাহমান, কুতুব উদ্দিন খান, লুৎফুর রাহমান পাবেল ও খসরুল ইসলাম। এসময় সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জনাব এমদাদুর রাহমান এমদাদ। তিনি বলেন, ‘আজ আমি সত্যি আনন্দিত, আমাদের এই প্রিয় বিদ্যালয়ের প্র্যাক্তন শিক্ষার্থীরা লন্ডনের মত ব্যাস্ত শহরে কাজ কর্ম ফেলে জড়ো হয়েছেন শুধু মাত্র বিদ্যালয়কে সম্মান জানাতে এটা গর্বের। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে আমাদের প্রাণ প্রিয় বিদ্যাপীঠের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি এর জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ।’
জমকালো বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানটি এক প্রর্যায়ে প্রিয় বিদ্যাপীঠ ও বৃহত্তর কামাল বাজার এলাকার বিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর গ্রেটার কামাল বাজার ডেভলাপমেন্ট ট্রাস্ট এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, পরিচিতি ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা, আপ্যায়ন, উপহার বিতরণ এবং মনোমোগ্ধকর স্টেজ- শো ছিল ছোখে পড়ার মত। এক কথায় এ যেনো কামাল বাজার প্রবাসীদের এক মিলনমেলা বসেছিল। বিদ্যালয় প্রতি যে টান ও ভালোবাসা তা প্রকাশ করেন সবাই। উল্লেখ্য যে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারে ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর ড. রাগীব আলী।
গ্রেটার কামাল বাজার ডেভলাপমেন্ট ট্রাস্ট এর চেয়ারপারসন এমদাদুর রাহমান এমদাদ এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সেক্রেটারি বখতিয়ার খান ও শাহেদ মিয়া এর পরিচালনায় প্রাধান অতিতি মিসেস রহিমা রহমান(Council Chair and First Citizen of London Borough of Newham) বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বলেন বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বলেন, লন্ডনে কামাল বাজার এলাকার মানুষের এমন উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। একটি বিদ্যালয়ের প্রতি আপনাদের এমন ভালবাসা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে নিংসন্দেহে। কমিউনিটিতে আপনারা অবদান রাখছেন। ঠিক একইভাবে পরবর্তী প্রজন্ম বিলেতে অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্যদিকে, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের খোঁজ করছিলেন প্রাক্তন ছাত্রী ইমরানা রাহমান, সাহারা খাতুন, নাসিমা বেগম, নন্দিতা বেগম ও সাবিনা বেগম।এক প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা বলেন, পাচটি বছর হাজী রাশীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর সহপাঠীদের মধ্য কেউ কেউ ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন। যদি কারও দেখা পান, সেই আশায় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনুষ্ঠানে এসে খুব ভালো লেগেছে ও মনে হচ্ছে নীজ বাড়ীতে আমরা চলে এসেছি। আজকের দিনটি আমাদের জন্য স্বরণীয় থাকবে নিংসন্দেহে। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন আগামী আমরা আরও এলাকা ভিত্তিক অনুষ্ঠান চাই যাতে সবাই একত্রিত হতে পারি।
সুবর্ণজয়ন্তীতে আরও বক্তব্যে রাখেনপ্র্যাক্তন শিক্ষার্থী রাজনীতিবীদ আলী আহমেদ, জনাব শাহগির বখত ফারুক(Former President BBCCI),জনাব মুজিবুর রহমান(Councillor, London Borough of Newham), বিশিস্ট কমিউনিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জনাব লোকমান হুসেন, জনাব মকসুদ রহমান, জনাব মিসবাউর রহমান,জনাব মজনু মিয়া ও শাহিন মোস্তফা সহ অন্যান্য। তাছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্যে রাখেন, ভাইস চেয়ারপারসন জনাব আব্দুল বাছিত চৌধুরী ও মোঃ আব্দুল আহাদ, সম্পাদনা পরিষদের অন্যতম সদস্য এক্টিভিস্ট মোঃ হাফিজুর রাহমান, সংগঠক পারভেজ আহমেদ, খসরু মিয়া, সদস্য ও অনলাইন এক্টিভিস্ট লুৎফুর রহমান পাবেল, মাহবুবুর রহমান,শাহ আলম হুবেব, খসরু মিয়া, জনাব হারুনুর রশীদ, রাজিউর রহমান চৌধুরী দুলাল, আব্দুল মান্নান, ইমরান হুসেইন সলিসিটর, আনোয়ার হুসেন ফজল।তাছাড়া, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গিয়াস উদ্দীন আহমেদ রানা, কবির আহমেদ লয়লুছ, আতিকুল ইসলাম সিরাজ আব্দুল হান্নান, মোহাম্মদ আলী মিষ্টার, আমিনুল হক রাজু, আবুল হাসনাত চৌধুরী রুমেল,নুরজাহান মতিন, সমাজ সেবিকা আম্বিয়া খানম,ম্যাইনস্টিম রাজনীতির পরিচিত মুখ ও এক্টিভিস্ট আমিনা আলী, লাইলী বেগম, ইমরানা রহমান ও জ্যুতি দেব টুম্পা। পরিশেষে সংগঠনের সেক্রেটারি তুখোড় সংগঠক বখতিয়ার খান এক প্রতিক্রিয়ায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়েসুবর্ণজয়ন্তী পালন করার, আজকের উপস্থিতি প্রমাণ করে আমরা কী পরিমাণ ভালোবাসি আমাদের বিদ্যালয়কে। আগামীতে আমরা বৃহত্তর এলাকার সকল প্রবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে আরও সুন্দর ও বড় পরিসরে প্রজেক্ট নিয়ে আসব।