লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের স্মরণসভায় হাইকমিশনার:আবদুল গাফফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেছেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।১৯ মে রোববার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত গাফ্ফার চৌধুরীর স্মরণসভায় স্মৃতিচারণকালে তিনি এ কথা বলেন।লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী।স্মৃতিচারণকালে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটি অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি সবসময় আপোসহীন ছিলেন। রাষ্ট্রীয় খরচে আবদুল গাফফার চৌধুরী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। মৃত্যুর পর বাংলাদেশে মরদেহ প্রেরণে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন। তাঁর স্মৃতিতে ‘ আবদুল গাফফার চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ ও তাঁর লন্ডনের বাড়িটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে তিনি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সহযোগিতা কামনা করেন ।
প্রায় অর্ধশতাধিক অতিথির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্মরণসভা শুরু হয় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। নীরবতা পালনকালে স্বস্ব ধর্মবিশ্বাস মতে গাফফার চৌধুরীর আত্মার শান্তি কামনা করেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাজমুল হোসেন এবং তাঁর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন বিবিসি বাংলার প্রযোজক সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন।স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক-কলামিস্ট গাজিউল হাসান খান, বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক উদয় শংকর দাশ, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক লোকমান হোসেন, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল আজিজ, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও মাসিক দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, স্পেক্ট্রাম রেডিও বাংলার পরিচালক মিসবাহ জামাল, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক উর্মি মাজহার, চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়ের, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী ও প্রেস ক্লাবের ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা।অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী । সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার সমাপ্তি ঘোষণা করা
হয়।

স্মরণসভায় স্মৃতিচারণকালে মহিব চৌধুরী বলেন, ১৯৮৭ সালে অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক নতুন দিনের সাথে সম্পৃক্ত হোন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিন বছর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি। মহিব চৌধুরী জানান, গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে তাঁর একটি বই প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।বিবিসি বাংলার সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসাইন গাফফার চৌধুরীর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলেন- ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ প্রতিপক্ষের আক্রমনে রাস্তায় পড়ে যান গাফফর চৌধুরী। পরবর্তীতে ওই দিন রাতেই শফিক রেহমানের
বাসায় বসে একুশে ফেব্রুয়ারির গানটি প্রথমে কবিতা আকারে রচনা করেন । পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ কবিতাটিতে সুর দেন। তখন থেকেই কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারির গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।স্মরণসভায় অন্যান্য বক্তারা তাঁদের স্মৃতিচারণায় বলেন, গাফফার চৌধুরী শুধু বাংলা ভাষাভাষীর জন্য নয়, সমগ্র উপমহাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক হিসেবে আজীবন বেঁচে থাকবেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রতিটি শাখায়ই ছিলো তাঁর গর্বিত পদচারণা । তবে তিনি তাঁর যে
সৃষ্টিকর্মের জন্য যুগযুগ বেঁচে থাকবেন, তা হলো তাঁর কালজয়ী একুশের গান। তাঁর অমর একুশের গান ততদিনই বেঁচে থাকবে, যতদিন বিশ্বে বাঙালি ও বাংলা ভাষা টিকে থাকবে।

উল্লেখ্য, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণকারি গাফফার চৌধুরী গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যূবরণ করেন। তাঁর জীবনের ৪৮ বছরই কেটেছে বিলেতে । ২৮ মে শনিবার রাজধানী ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রী সেলিনা আফরোজের কবরের পাশে তিনি সমাহিত হন।

You might also like