লীডসে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব নববর্ষ উদযাপন
শোয়ায়েব চমক
সত্যবাণী
লীডস : নর্থ অফ ইংল্যান্ডের শহর লীডস এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের আয়োজনে বৈশাখী অনুষ্ঠান ১৪৩১।
বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা এবং বাংলাদেশী খাবারের টানে বিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে উত্তর ইংল্যান্ডের লীডস শহরে বসবাসরত বাংলাদেশীরা নিয়মিত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।
প্রথম প্রথম এই উদযাপনটা শুরু হয়েছিলো এখানকার কয়েকটি পরিবার মিলে স্থানীয় রাউন্ডহে পার্কে খুব ছোট পরিসরে ঘরে তৈরি নানান ধরনের বাংলাদেশী খাবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
যত সময় গড়িয়েছে লীডস শহরে বাঙ্গালীদের সংখ্যা বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে অনুষ্ঠানের পরিধি। সেই সূত্র ধরেই গত ৫ই মে প্রায় দেড়শো বাংলাদেশীর অংশগ্রহনে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি সেন্টারে বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে আয়োজন যত বড়ই হোক না কেনো, অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেনো, অনুষ্ঠানের আয়োজকরা নিজেদের ঘরে তৈরি খাবার নিয়ে এসে সবাই মিলে এক সাথে ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছেন।
এই বছর প্রায় পঁচিশটিরও বেশী পরিবার তেইশ রকমের খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। যার মধ্যে ছিল কাঁচা আমের ডাল, মাছের ভূনা, মুরগির ভূনা, নানা রকমের ভর্তা, লতি চিংড়ী সহ নানা পদের বাংলাদেশী খাবার। সেই সাথে ছিল ঘরে তৈরী মিষ্টি, পায়েশ, জিলাপি এবং দই।
বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠানের শুরুতে টক ঝাল চটপটি এবং ঝালমুড়ি দিয়ে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সমবেত সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। এরপর কবিতা আবৃত্তি, ছোটদের একক পরিবেশনা, ছোটদের অভিনীত একটি নাটক, ছোটদের পরিবেশনায় নাচ, বড়দের অভিনীত একটি নাটক এবং সবশেষে স্থানীয় বাংলাদেশী শিল্পীদের পরিবেশনায় আধুনিক গান দিয়ে রাত দশটায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে বড়দের তুলনায় ছোটদের অংশগ্রহনকে উৎসাহিত করেন বেশী। যাতে এখানে বড় হওয়া নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা তৈরি হয়।
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বড় বড় শহর যেমন লন্ডন, ম্যানচেস্টার অথবা বার্মিংহ্যামে অনেক বড় করে বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু লীডস এ বসবাসরত বাংলাদেশীরা মনে করেন উত্তর ইংল্যান্ডের তাদের এই ছোট্ট শহরে একসাথে এত গুলো পরিবার একত্রিত হয়ে নিজেদের ঘরে তৈরি করা খাবার ভাগাভাগি করে খেয়ে, নিজেদের বাচ্চাদের বাংলা গান, কবিতা, নৃত্য পরিবেশনা একসাথে বসে দেখা; সে এক বিরাট আনন্দ। প্রতিটি কাজ ভাগ করে নিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এই আয়োজনে অংশ নেয়াটাই আনন্দের। এ যেন লীডস শহরে এক বিশাল বাংলাদেশী পরিবার। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেশ থাকবে বছরব্যাপী।