শরতের ছোঁয়ায় স্পটগুলোতে কমনীয়তা বাড়ছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে ফিরে আসছে সুদিন
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সুদিন ফিরছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। ভয়াবহ বন্যার ধকল সামলে এবার এ শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুততম সময়ে রাস্তাঘাট মেরামত করে দিলে আবারো পর্যটক টানবে ‘প্রকৃতি কন্যা’ সিলেট। পর্যটনের ভরা এই মৌসুম বাড়বে হোটেল-মোটেলের ব্যবসা। অন্যদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, বেশ কিছু রাস্তাঘাট মেরামতের প্রকল্প পাশ হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যটন এলাকার রাস্তা মেরামত করে দেয়া হবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা সিলেট। চা-বাগান, জলমগ্ন বুনো বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি হাওরসহ পুরো বিভাগে জুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রচুর পর্যটনকেন্দ্র। প্রকৃতিকে কাছে থেকে দেখার মতো রয়েছে বহু পর্যটনস্পট। পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে সিলেটে বাগড়া দেয় কয়েক দফা বন্যা। করোনার পর পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে সিলেটে। টইটম্বুর ছিলো সিলেটের হোটেল-মোটেল। ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিলো চাঙ্গা। চলতি বছরের মে ও জুন মাসে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। এরপরই ধ্বস নামে সিলেটের পর্যটন শিল্পে।
বন্যা পুনর্বাসন ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসেব মতে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগ এলাকা ছিল বন্যা কবলিত। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কৃষি, মৎস্যসহ সকল খাতে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে বন্যা। গৃহহীন হয়ে পড়েন ৪০ হাজারের বেশী মানুষ। পর্যটনকেন্দ্রগুলোও ছিলো পানিতে নিমজ্জিত। বন্যার পরে পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ব্যবসার আশা করলেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উল্টো ভরা মৌসুমেও খরা গেছে পর্যটন শিল্পের। প্রতিদিন লোকসান গুণতে হয়েছে শত কোটি টাকা। অনেকেই মনে করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পর্যটকরা ছিলেন কুয়াকাটামুখী। যার জন্য সিলেটে কাক্ষিত পর্যটক সমাগম ঘটেনি। অবশ্য এবার পুরনো রূপে ফিরবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো এমন প্রত্যাশা সবার।
সিলেট হোটেল-মোটেল এন্ড গেস্ট হাউস ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএম শোয়েব বলেন, ধীরে ধীরে খরা কাটছে সিলেটের পর্যটনের। অনেকেই আসতে শুরু করেছেন। বন্যার কারণে অনেকেই সিলেটে আসেন নি। আবার পদ্মা সেতু চালু হবার পর পর্যটকরা অনেকটা বরিশাল-কুয়াকাটামুখী ছিলেন। এ দুই কারণে মূলত এবার সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কম ছিলো। তবে বিগত কয়েক দিন থেকে পর্যটকদের দেখা মিলছে। নিয়মিত হোটেল বুকড্ হচ্ছে।সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব আরো বলেন, পর্যটন শিল্পের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে ঠিকই। তবে আর বসে থাকলে চলবে না। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের মেরামত ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। সিলেটের সবগুলো পর্যটনকেন্দ্র প্রস্তুত-এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।সিলেট হোটেল-মোটেল এন্ড গেস্ট হাউস ওনার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, বন্যা বেশ আগেই চলে গেছে। সব ক’টা পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত। তবুও অন্য বছরের মতো পর্যটক সমাগম ঘটেনি। তিনি বলেন, এখন স্কুল-কলেজ সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ। পর্যটক এমনিতেই বাড়ার কথা। তবে পর্যটনের জন্য নতুন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি। ভাড়া অতিরিক্ত হওয়ায় অনেকেই সাহস করতে পারছেন না। আশাকরি, দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।সিলেট নগরি ঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র এশিয়ার অন্যতম জলারবন রাতারগুল। অন্যান্য বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটতো। এবার খারাপ হলেও গত কিছুদিন থেকে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। রাতারগুলের প্রবেশপথ মোটরঘাটের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউপি সদস্য আনসার আলী জানান, একটা সময়ে এই মৌসুমে ঢল নামতো পর্যটকের, তবুও ভালো পর্যটক সমাগম ঘটছে। তিনি বলেন, রাতারগুলের বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এই এলাকা আরো আকর্ষণীয় হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক আবিদুর রহমান জানান, সম্প্রতি পর্যটকদের দেখা মিলছে সাদাপাথরে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় অনেকেই সিলেটে ঘুরতে এলে সাদাপাথরকে পছন্দের শীর্ষে রাখছেন।জাফলং এর মামার দোকানের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, এই মৌসুমে জাফলং এর সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়েছে। ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়ছে বলে জানান তিনি।সিলেট ট্যুরিজম ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর লিটন বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যাতায়াতের রাস্তাগুলো খুব খারাপ। দ্রুততম সময়ে এই রাস্তাঘাট সংস্কার করে দেয়া প্রয়োজন।সওজ সিলেট’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিগত বন্যায় সিলেটের ১৮১ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ২৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শিগগিরই পাশ হবে। এক্ষেত্রে পর্যটন এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইনামুল কবীর বলেন, ৩৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের টেন্ডার আহবান করা হয়ে গেছে। বেশি ভাঙ্গা রাস্তাগুলো আগে সংস্কার করা হবে। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প পাশ হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর রাস্তা প্রশস্তকরণসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প থাকবে।