শুধু ভাড়া থেকে ব্যয় মিটবে না, বিকল্প আয়ে চলবে মেট্রোরেল
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে মেট্রোরেল আগামী বছরের জুন নাগাদ চালু করে দেয়া হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল ভায়াডাক্টে পরীক্ষামূলক চলাচলও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় স্বপ্নের এ বাহনটির ভাড়া নিয়ে বেশ আগ্রহ সাধারণ যাত্রীদের। আর ব্যয় মেটাতে চিন্তিত মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কারণ শুধু যাত্রী ভাড়া থেকে মেট্রোরেলের খরচ মেটানো যাবে না। আবার ভাড়া নাগালের মধ্যে না হলে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন যাত্রীরা। তখন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই বিনিয়োগ জলে যাবে। এই চিন্তা থেকেই ভর্তুকি ও বিকল্প আয়ের কথা ভাবা হচ্ছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নির্বাহী পরিচালক ও ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রধান খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোরেলের ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা কখনও কোনও প্রস্তাব করিনি। এমন বিষয়ে কারও সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই, এটা সম্পূর্ণ ভুলভাবে ছড়িয়েছে। এটি একটি বড় সাবজেক্ট। ভাড়া নির্ধারণ ছাড়াতো ট্রেন চলবে না। সময় হলে ভাড়াও নির্ধারণ হবে আপনারাও জানতে পারবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল নিয়ে যেমন সাধারণ মানুষের আগ্রহ রয়েছে, সরকারও একে গুরুত্ব দিচ্ছে। যখন ভাড়া নির্ধারণ হবে তখন মানুষের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়েই করা হবে।কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশাল এ ব্যয় শুধু যাত্রী ভাড়া থেকে তোলা সম্ভব নয়। এ জন্য বিকল্প আয় বা ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে।
মেট্রোরেল সূত্র জানিয়েছে, নির্মাণ ব্যয়ের মতোই সরকারের এ মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও তুলনামূলক বেশি। এই রেলপথ পরিচালনার জন্য দৈনিক ব্যয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। পাশাপাশি মেট্রোর বিশাল নির্মাণ ব্যয়ও রয়েছে। ব্যয়বহুল এই বাহনটিতে দৈনিক এ পরিমাণ অর্থ ওঠানো কঠিন হবে। ফলে কেবল যাত্রী পরিবহন করে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না। এ জন্য ভর্তুকির প্রয়োজন হবে। তবে বিকল্প খাত থেকে আয়ের চিন্তাভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিপণিবিতান, হোটেল, স্টেশন প্লাজা, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।এ লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে এমআরটি লাইন-৬ এর প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের অধীনে ২৮ দশমিক ৬১৭ একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) এবং স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য এ জমি ব্যবহার করা হবে। রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্বের উত্তরা সেন্টার স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।জানতে চাওয়া হলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’ ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই বিষয়টি কারা নির্ধারণ করবে? এটা তো আমার (মেট্রোরেল) বিষয় না। এটা সরকার নির্ধারণ করবে। আর ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তাহলে কেন ভর্তুকির প্রশ্ন আসবে?’
তিনি আরও বলেন,‘আমাদের আইনে দুইটি বিষয় আছে। প্রথমত, জনগণের সামর্থ্য বা সক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য যে ব্যয় হবে সেটি তুলে আনা। এখন এটা কীভাবে সমন্বয় করবে, সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমার পক্ষে কোনও কিছুই বলা সম্ভব না। আর যদি কোনও কারণে সরকার মনে করে ভর্তুকি দিতে হবে, সেটি সরকারের বিষয়।মেট্রোরেল এমডি বলেন, ‘আমাদের যেটা পরিচালনা ব্যয় সেটি সরকারকে জানিয়ে দেবো। আমরা বলবো, পরিচালনা ব্যয় এত হলে মেট্রোরেল নিজের মতো করে চলতে পারবে। সরকার যদি মনে করে সামর্থ্য ও সক্ষমতার জন্য প্রথম দিকে একটু কমিয়ে ভাড়া রাখবো, সে ক্ষেত্রে ওই অর্থটা না আসলে তো মেট্রোরেল চলতে পারবে না। এটা যদি সমন্বয় করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা প্রথম থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে পারবো।’
প্রতিমাসে কী পরিমাণ খরচ হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে বিষয়ে আমরা এখন কাজ করছি। হয়তো মাসখানেক পরে কমপ্লিট কথা বলতে পারবো। কাজ এখনও শেষ হয়নি।বিকল্প উৎস থেকে আয়ের প্রসঙ্গে এমডি বলেন, ‘হ্যাঁ সেখান থেকে তো আয় আসবে। এটা দুনিয়ার সবখানেই রয়েছে। শুধু ভাড়া দিয়ে মেট্রোরেল লাভজনক করা যায় না। তার সঙ্গে কতগুলো জিনিস সংযুক্ত রয়েছে। স্টেশনে কমার্শিয়াল স্পেস। টিওডি বা ট্রান্সপোর্ট অব ইন্টার ডেভেলপমেন্ট। তার সঙ্গে স্টেশন প্লাজা। এই তিনটি বিষয় যদি করা যায় তাহলে যে ঘাটতিটা থাকবে, সেটা সেখান থেকে মেটানো যাবে। এভাবেই দেখা গেছে সারা দুনিয়াতে সবাই লাভজনকভাবে চলছে।’