শুভ জন্মদিন রেকর্ডের বরপুত্র
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানের প্রশ্নে যে কেউ সবার ওপরে রাখেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে। কিন্তু দুই নম্বরে কাকে রাখা হবে, তা নিয়েই চলে রাজ্যের আলোচনা। কখনও শচিন টেন্ডুলকার, আবার কখন ব্রায়ান লারা- ক্রিকেটপ্রেমীদের সংশয়ের কারণ এ দুটি নাম।প্রায় ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে শচিন করেছেন ৩৪ হাজারের বেশি রান, হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। তবু খেলার ধরনের কারণে তার পাশাপাশিই উচ্চারিত হয় লারার নাম। তিনিও প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে করেছেন ২৩ হাজারের কাছাকাছি রান।এর চেয়েও বড় কথা, ক্রিকেটের রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলাটা যেন দারুণ উপভোগ করতেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ব্রায়ান লারা। আজ থেকে ঠিক ৫১ বছর আগে, ১৯৬৯ সালের ২ মে তারিখে ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করেছেন বাঁহাতি এ ব্যাটিং মায়েস্ত্রো।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ-১৯ ক্রিকেট। সেখান থেকেই শুরু তার রেকর্ড ভাঙার খেলা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেন রেকর্ড ৪৯৮ রানের ইনিংস। তিনি ভাঙেন কার্ল হুপারের করা ৪৮০ রানের রেকর্ড।
তবে জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। সে বছরের পাকিস্তান সফরে নভেম্বরে ওয়ানডে এবং ডিসেম্বরে টেস্ট ক্রিকেট নাম লেখান লারা। অভিষেক ম্যাচ তথা সিরিজ খুব একটা স্মরণীয় ছিল না তার জন্য। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছরে পাননি সেঞ্চুরির দেখাও।লারার তিন অঙ্ক ছোঁয়ার অপেক্ষা শেষ হয় ১৯৯৩ সালে। সে বছরের প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে খেলেন ২৭৭ রানের ইনিংস। মনে হচ্ছিল, স্যার গ্যারি সোবার্সের নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে করা ৩৬৪ রানের রেকর্ড হয়তো ভেঙেই ফেলবেন লারা।
তা ভাঙতে পারেননি। তবে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড ঠিকই ভাঙেন লারা। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টে খেলেন ৩৭৫ রানের ইনিংস। একই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ব্যাট থেকে ৫০১ রানের অপরাজিত ইনিংস। দুটিই টেস্ট ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বিশ্বরেকর্ড।তবে ৯ বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লারার রেকর্ড ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। তিনি করেন ৩৮০ রান। কিন্তু এ রেকর্ড হেইডেনের কাছে ছয় মাসও থাকতে দেননি রেকর্ডের বরপুত্র লারা। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেক অ্যান্টিগা টেস্টে অপরাজিত ৪০০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যা কি না এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র চারশ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস।
সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ডের বাইরেও আরও অনেক স্মরণীয় ইনিংস এসেছে লারার ব্যাট থেকে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫৩, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০১ সালের সিরিজে একাই ৬৮৮ রান, অসিদের বিপক্ষেই ১৯৯৯ সালে ২১৩ রানের ইনিংসগুলো যেকোন ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে দোলা দেয় আজও।টেস্ট অভিষেক পাকিস্তানের বিপক্ষে, তাদেরই মাটিতে। ২০০৬ সালে এই ফরম্যাট থেকে বিদায়টাও একই কায়দায়। মাঝের ১৬ বছরে ১৩১ ম্যাচের ২৩২ ইনিংসে ৩৪ সেঞ্চুরি ও ৪৮ হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ১১৯৫৩ রান। ওয়ানডে থেকে বিদায় নিয়েছেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। এই ফরম্যাটেও রয়েছেন দশ হাজারের বেশি রান। ২৯৯ ম্যাচ খেলে ১৯ সেঞ্চুরি ও ৬৩ ফিফটিতে করেছেন ১০ হাজার ৪শ ৫ রান।আজ থেকে ঠিক ৫১ বছর আগে পৃথিবীতে এসেছেন ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান। তার জন্মদিনে সামনের দিনগুলোর জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।