শেখ মো. আবদুল্লাহর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ চলে গেলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকবারের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। দলের পক্ষ থেকে আলেম-উলামাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে লিয়াজোঁ করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখতেন।শেখ আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন।এজন্য নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ আবদুল্লাহকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি নিজে সংসদ সদস্য না হলেও সেখানে একজন সাংসদের ভূমিকা পালন করতেন।
প্রায় দেড় বছর তিনি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি সরকার ও দলের পক্ষ থেকে আলেম-উলামার সঙ্গে সম্পর্কের বিশেষ উন্নয়ন করেন। গত বছর দেশের সব মত-পথের আলেমদের একটি কাফেলা নিয়ে তিনি হজে যান এবং এই উদ্যোগের কারণে বেশ সুনাম কুড়ান। এর আগেও আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলসমূহের সম্পর্কন্নোয়ন এবং কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির পেছনে ভূমিকা পালন করেন।শেখ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।
১৯৬১ সালে একই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য ও পরবর্তী সময়ে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।
আবদুল্লাহ ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সবকটি সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।
আবদুল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আবদুল্লাহ এ আসনে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।