সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে লন্ডনে মানব বন্ধন, হাই কমিশনের সামনে অনশন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী 

লন্ডন: পবীত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে দুর্গাপুজার সময়ে কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে মানব বন্ধন করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালীরা।

সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে পূর্ব লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

সংগঠনের ইউকে চ্যাপ্টার সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রুবি হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর এমন ধারাবাহিক ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হিন্দু বা মুসলমান কোন প্রকৃত ধার্মিক পবীত্র কোরআনের এমন অবমাননা করতে পারে না। এই ঘটনার পেছনে অবশ্যই কোন সুগভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।

দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বক্তারা বলেন, আমাদের চীরচেনা মাতৃভূমি আজ কেন ধীরে ধীরে আমাদের কাছে অচেনা হয়ে যাচ্ছে, এর কারন খুঁজতে হবে আমাদের। বাংলার হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গুটি কয়েক দুর্বৃত্তের কারনে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না, এমন মন্তব্য করে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক, নেতৃত্বদানকারী সংগঠন ক্ষমতায় থাকতে সাম্প্রদায়িক এই দুর্বৃত্তদের কেন প্রতিহত করা যাচ্ছেনা তা আমরা জানতে চাই। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির অনুচররা বাঙালীর দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িকতার ঐতিহ্য ধ্বংস করার কোন গোপন খেলা খেলছে কি না, এসব বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অবিলম্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও আহবান জানান বক্তারা। তারা বলেন, ধর্মীয় পরিচয়ের আগে আমাদের মানুষ পরিচয় পুনেরোদ্ধারই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরী।
বক্তারা, পবীত্র কোরআন শরীফ কে বা কারা হিন্দু সম্প্রাদায়ের দেবতার পায়ে রেখেছে এবং এই ঘটনাকে ইস্যু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর কারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তা খুঁজে বের করে অবিলম্বে এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সর্বোচ্চটুকু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি রফিকুল হাসান খান, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনসার আহমেদ উল্লা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হরমুজ আলী, সাংবাদিক ও সত্যবাণীর সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, সাংবাদিক বুলবুল হাসান, যুক্তরাজ্য সিপিবির সম্পাদক কমরেড আবেদ আলী, সত্যেন স্কুলের সভাপতি গোপাল দাশ, সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের সভাপতি কাউন্সিলার পুষ্পিতা গুপ্তা, সাধারণ সম্পাদক সাহিত্য পাল, বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েসন ইউকের সভাপতি প্রশান্ত পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক সুজিত চৌধুরী,  যুক্তরাজ্য জাসদ সহসভাপতি মুজিবুল হক মনি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স কাউন্সিল ইউকের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাশ, বি হিউম্যান ফাস্ট মুভমেন্টের সভাপতি অজন্তা দেব রায়, মানবাধিকার নেতা সলিসিটর সৈয়দ ইকবাল, বারিস্টার সৈয়দ রুম্মান, ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত দাশগুপ্ত, বারিস্টার কামরুল হাসান তুষার, জাসদ নেতা সাবুল শামসুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান শাহনুর, ইউনাইটেড হিন্দু কালচারাল এসোসিয়েশনের সভাপতি গণেশ ঘোষ, মানবাধিকার নেতা সলিসিটর সাইদুজ্জামান সাঈদ, মোস্তফা কামাল মিলন, লেবার পার্টির নেতা মুরাদ কোরেশি, নারী নেত্রী সৈয়দা নাজনীন শিখা, হিন্দু ওয়েলফেয়ার এসেসিয়েশনের তপন মণ্ডল , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুক্তরাজ্য শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির আখতারুজ্জামান, সংস্কৃতিকর্মী স্মৃতি আজাদ ও সাংবাদিক জুয়েল রাজ প্রমূখ।

হাই কমিশনের সামনে অনশণ

এদিকে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের  উপর নারকীয় নির্যাতন নিপীড়ন,  অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের  সামনে নির্দিষ্ট  কিছু  দাবী নিয়ে আমরন অনশন করেন সেক্যুলার  মুভমেন্ট  বাংলাদেশ এর সভাপতি, লন্ডন রেডব্রিজ কাউন্সিলের লেবার দলীয় কাউন্সিলর পুষ্পিতা গুপ্ত।

মঙ্গলবার লন্ডন সময় সকাল ৬ টা থেকে একটানা ৭টা পর্যন্ত অনশণের পর হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এসে তাঁর দাবি দাওয়া সরকারের উচ্চ মহলে প্রেরনের আশ্বাস দিলে তিনি অণ্য ভঙ্গ করেন।
কয়েক দফা দাবী সম্বলিত বিভিন্ন লিফলেট প্লেকার্ড,  পোষ্টার নিয়ে  দিনব্যাপী এই অনশণ পালন করেন  পুস্পিতা।
দাবীগুলো সম্পর্কে, পুষ্পিতা  গুপ্ত জানান,
আমাদের দাবি স্পষ্ট:
১. বছরের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় উৎসব  উদযাপনের সময় হিন্দুদের রক্ষা না করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে অনতিবিলম্বে  ক্ষমা প্রার্থনা।
২. সমস্ত হিন্দু উৎসব, জীবন ও সম্পদের সুরক্ষার জন্য পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছ থেকে জবাবদিহিতা এবং ত্বরিত পদক্ষেপ।
৩. গত সপ্তাহে সংগঠিত নৃশংসতার শিকার মানুষদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত  এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ।
৪. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রয়োগ এবং সকল অপরাধীদের বিচার, তাদের অপরাধকে এক ধরনের উগ্রবাদী সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচনা করা।
৫.  নিরীহ নিহতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ ও  সংহতি প্রকাশের জন্য হাই কমিশন প্রাঙ্গণে  জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা,
এবং  ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ছদ্ম ব্লাসফেমি আইনের প্রথা বন্ধ করা।
তিনি বলেন, একটি সহনশীল ও উদার তরুণ প্রজন্ম তৈরির জন্য প্রতিটি স্তরে শিক্ষা পাঠ্যক্রম ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক দর্শনের আলোকে সংস্কার করতে হবে।
রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ১৯৭২  সালের সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ পূণঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী করতে হবে এবং সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তাদের নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার দিতে হবে।
You might also like