সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ  ইতিহাস চর্চার উপর গুরুত্ব দিন, ইতিহাসের পরিচর্চা করুন। ইতিহাস বিকৃতকারীদের জাতি কোন দিন ক্ষমা করবে না। ইতিহাসকে পুজি করে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা যাবে না।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর আহবায়ক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট পারভেজ হাসেম, বিপ্লব চাকমা, মহানগর নেতা জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, মোঃ আনিসুর রহমান, তুষার আব্দুল্লাহ, বাবুল চৌধুরী, রানা আহমেদ, যোবাইদা সিকদার যুথী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব জুবায়ের আলম।

বক্তারা বলেন, মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা আমাদের ইতিহাসের অনেক গৌরবের অধ্যায় হারাতে বসেছি। এই জনপদটি ছিল সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের। ধর্ম-বর্ণ নিবির্শেষে পারস্পারিক সহ অবস্থানের ইতিহাস বাঙালীর হাজারো বছরের ঐতিহ্য। ব্রিটিশ বেনিয়াদের কবলে পড়ে এই ঐতিহ্যকে আমরা হারিয়েছি। ধর্মের নামে বিবেদ, মানুষ হত্যা, লুন্ঠন, সন্ত্রাসের রাজত্ব ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের লোভ-লালসার স্বীকার হয়ে আমাদের সামাজিক কাঠামোগত দিক থেকে আমরা অনেক দুরে পিছিয়ে পড়েছি। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্বের অসাড়তার মধ্যদিয়ে এই উপমহাদেশের বিভক্তি আমাদের সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের উপর আঘাত করা হয়েছে। ধর্মান্ধতা ক্রমশ বাড়ছে। সেই থেকে বাঙালীরা অদ্যবদি ইতিহাসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে শামিল রয়েছে। কথিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন করে চাপিয়ে দেয়া অপশক্তিকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি সেদিন। পাকিস্তানের শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে শামিল হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন মূলত আমাদের সম্প্রীতি ও সহঅবস্থানের লড়াইয়ের ফসল। সে দিন খুব ছোট্ট স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও তা বাস্তবায়নের পথে সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্তে ১৯৭৫ সালেই জাতির পিতাকে স্ব-পরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে জাতীয় চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে। শোষন-বৈষম্য ও সম্প্রীতির বাংলাদেশকে সেদিন থেকে কবর দেয়া শুরু যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা মনে করি এ সম্প্রীতি, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত স্বদেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষে জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষে ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক সকল শক্তির ৭১’ এর চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।মনে রাখতে হবে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ সময় সামরিক স্বৈরশাসনের সময় এই দেশে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করাও এক ধরনের অপরাধ ছিলো। সেই কঠিন সময়ে স্ব-পরিবারের বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ ছিলো। বর্তমান সময়টিতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে পোষ্টার দেখতে পাই তাদের মধ্যে কতজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তা জানা দরকার। এদের অনেকেই যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করার কাজে লিপ্ত রয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা এদের চিহ্নিত করা দরকার। দেশকে বাঁচাতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে সাময়িক স্বার্থ হাসিল যারা করেছেন তাদের দেশবাসী ক্ষমা করবেনা। যারা স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মাদ্ধ অপশক্তি ও মাফিয়াচক্রকে নিয়ে ক্ষমতার ভাগাভাগি করে দেশকে বিপদগ্রস্ত করেছেন তাদের জাতি রুখে দাঁড়াবে। অর্থপাচার, লুটপাট, ধর্মান্ধ শক্তিকে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া ও আসার যে রাজনীতি তা বন্ধ করতে হবে, সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বস্তরে একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী, জঙ্গীবাদ, মাফিয়া চক্র, মানব পাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।দীর্ঘ সময় থেকে বৈশি^ক মহামারী করোনার যে প্রভাব দেশ-বিদেশে চলছে তাতে আমাদের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। তার উপর দেশের ভাবমুর্তি নিয়ে ইতোমধ্যে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের মন্তব্য বের হচ্ছে তা ভবিষৎ জাতীয় অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে অশনি সংকেত হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় অগ্রযাত্রার পথ নির্দেশনা তৈরী জরুরী হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনেকরি।

You might also like