সাংবাদিক মুহাম্মদ জুবায়ের নির্বাহী মেয়র-এর স্ট্রাটিজিক এডভাইজার নিযুক্ত

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন:  লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের দু টার্মের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারী, বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ জুবায়ের সম্প্রতি টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র—এর স্ট্রাটিজিক এডভাইজার (বিএমই মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি) নিযুক্ত হয়েছেন। নতুন এই দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি চ্যানেল এস—এর চীফ রিপোর্টার পদ থেকে অব্যহতি নেন। প্রায় ১৭ বছর টানা কাজ করার পর পেশাগত সূত্রে চ্যানেল এস ছাড়লেন জুবায়ের। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত মেয়রের উপদেষ্ঠা হিসেবে নতুন দায়িত্বে অভিষিক্ত হওয়া সত্বেও তিনি সময় সুযোগে লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান এবং বিশেষ প্রজেক্টের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত থাকবেন বলে আশা করছেন। এছাড়াও ‘ট্রু নিউজ’ নামে একটি স্বাধীন অনলাইন প্রডাকশনের কথাও ভাবছেন জুবায়ের।
মুহাম্মদ জুবায়ের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের অফিসের চীফ অব স্টাফ এমি জ্যাকসনের নেতৃত্বাধিন অত্যন্ত মেধাবী ও উদ্ভাবনী টিমে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেব যুক্ত হয়েছেন। মেয়র লুৎফুর রহমানের চীফ অব স্টাফ হিসেবে যোগ দেয়ার আগে এমি জ্যাকসন পার্লামেন্টারী লেবার পার্টির ডেপুটি চীফ এবং ব্রিটেনের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ‘ইউনাইট’ এর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাহী মেয়রের অফিসে হেড অব এক্সটারনাল রিলেশন্স পদে নিয়োগ পেয়েছেন ডঃ কিরন এন্ড্রু ও সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজার পদে অক্সফোর্ড গ্রেজুয়েট এমি এডি। উল্লেখ্য, মেয়র লুৎফুর রহমান হচ্ছেন, ইউকের প্রথম এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত মেয়র এবং একই সাথে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়রের মর্যাদাও বাংলাদেশী অরিজিনি এই রাজনীতিকের।
মুহাম্মদ জুবায়ের প্রায় ১৯ বছর যাবৎ ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ায় সক্রিয়। স্থায়িভাবে ব্রিটেন আসার আগে প্রায় ৬ বছর তিনি সিলেটে পেশাধার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে এডভাইজার হিসেবে কাজ করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট থেকে শুরু করে বিবিসি একাডেমি, চ্যানেল ফোর এবং দ্য গার্ডিয়ান মাস্টার ক্লাস থেকে সাংবাদিকতার ওপর ট্রেনিং নিয়েছেন তিনি। তার লেখা একটি গ্রন্থ এবং সম্পাদিত কয়েকটি বিশেষ প্রকাশনাও রয়েছে।

চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টারের দায়িত্বের পাশপাশি তিনি সিনিয়র প্রডিউসার হিসেবেও কাজ করেন। কো—প্রডিউসার ছিলেন আলোচিত লাইভ শো রিয়েলিটি উইথ মাহি অনুষ্ঠানের। কমিউনিটির প্রধান ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়া এবং এখানকার জীবন সমাজ বাস্তবতার আলোকে রিপোর্টিং—এর জন্য বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তার। বৃটেনের প্রিন্স চার্লস (বর্তমানে রাজা), ইউকে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় প্রধানসহ বহু হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বকে নিয়ে নিউজ কাভার করেছেন জুবায়ের।
মুহাম্মদ জুবায়েরের বহু ডক্যুমেন্টারীও আলোচিত হয়েছে। তিনি এক সময় চ্যানেল এস—এর জনপ্রিয় ডকুমেন্টারী প্রোগ্রাম ডিটেইল্ড স্টোরির ডিরেক্টর ছিলেন। গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন তার নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী কমিশন করে। তার ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এবং ডক্যুামেন্টারী লন্ডনে একটি বড় ধরনের জালিয়াত মামলায় সত্য উদঘাটনে সহযোগি ছিলো। কোর্টের চুড়ান্ত রায়ে পুলিশ সূত্রে এই ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। চ্যানেল এস—এর অই রিপোর্টের সূত্র ধরেই গ্রেফতার হন প্রধান আসামী।
সাংবাদিকতা ও মিডিয়া পরামর্শক—এর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জুবায়ের কমিউনিটি প্রেক্ষিতে টিভি রিপোর্টিং—এর একজন ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছেন।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে ভলান্টারী কাজেও সক্রিয় মুহাম্মদ জুবায়ের। তিনি ক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে নানা পদে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ১৭ বছর। ছিলেন দুই টার্ম করে যথাক্রমে জেনারেল সেক্রেটারী, ট্রেজারার, এসিসটেন্ট সেক্রেটারী ও ওর্গানাইজিং সেক্রেটারী। ক্লাবের বড় দুটি অর্জন নিজস্ব প্রোপার্টি ও নিজস্ব অফিস প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মুহাম্মদ জুবায়ের অনেকগুলো মানবিক উদ্যোগের সহযোগি। কভিড—১৯ মহামারীর সময় চ্যানেল এস—এর ‘ফিড ফাইভ থাউজেন্ড’ প্রজেক্ট, ২০১৯ সালে বহুল প্রশংসিত ‘সেইভ তাফিদা’ ক্যাম্পেইন ও ২০২২ সালে বন্যা পরবর্তী ‘সেইভ সিলেট টুগেদার’ প্রজেক্টের কো—অর্ডিনেটর ছিলেন। ‘লাভ ফর এনএইচএস’—প্রজেক্টের মাধ্যমে কোভিডকালের ভূমিকার জন্য বৃটিশ হেলথ ওয়ার্কারদের প্রদান করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড, এই প্রজেক্টেও ফান্ডরেইজিং পার্টনারদের সমন্বয় করেন তিনি।
ইতিমধ্যে প্রেস ক্লাবে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ক্যানারি ওয়ার্ফ—এর এওয়ার্ড লাভ করেন জুবায়ের। এছাড়া লন্ডনে সানরাইজ টুডে এবং ইস্টউড এওয়ার্ড পেয়েছেন ‘বেস্ট রিপোর্টিং’—ক্যাটাগরিতে। তালিকাভূক্ত হয়েছেন বৃটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার হান্ড্রেডস—এ ২০১৮ সালের নেক্সট জেনারেশন পাবলিক্যাশন্স—এ। কোভিডকালে অনন্য ভূমিকা এবং বিশেষ করে কারী ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে যথার্থ রিপোর্টিং—এর জন্য বৃটিশ কারী এওয়ার্ড লাভ করেন ২০২০—এ। এটি ছিলো বৃটিশ কারী এওয়ার্ড ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই—এর জীবনের শেষ আয়োজন এবং জুবায়েরকে এই এওয়ার্ড উপস্থাপন করেন বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক মিডিয়া পার্সনালিটি রাগি ওমর। এওয়ার্ডস—এর প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, ‘মুহাম্মদ জুবায়ের একজন পরিশ্রমী ও মানবিক বোধ সম্পন্ন সাংবাদিক। তিনি নিঃস্বার্থভাবে কমিউনিটির কল্যাণে সাংবাদিকতার মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। তার অনুসন্ধানী ও তথ্য ভিত্তিক রিপোর্টিং—এর মাধ্যমে বহু বিষয়ে কমিউনিটি আলোকিত হয়।’

You might also like