সিআইডির ওপর হামলাকারী অভিযুক্তদের এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ এখনো অধরা থেকে গেলো সিলেটে সিআইডি টিমের ওপর হামলাকারীরা। ঘটনার পরদিন পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধার করা হলেও জড়িত হামলাকারীদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
ঘটনার পরদিন অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন সিআইডির এক কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ পরদিন পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও পলাতক আসামি এবং হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় হামলাকারী চোরাকারবারিদের ধরতে না পারায় থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, ঘটনার পরদিন আমরা পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি। তবে পলাতক আসামি ও হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, গত ১৪ অক্টোবর শুক্রবার জৈন্তাপুরে ভারত থেকে একটি ডিআই ট্রাকে আসা চোরাই মালামাল ধরতে উপজেলার হরিপুরে চৌকি বসিয়ে তল্লাশী চালায় সিআইডি টিম। এ সময় ধলাই মিয়া (১৯) নামে এক আসামিকে আটক করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে ৮০/৯০ জন  চোরাকারবারি সম্মিলিত হয়ে সিআইডি টিমের ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি মারপিট করে সিআইডির এক কর্মকর্তার হাত ভেঙে দেয়া হয়। ওইদিন আরেকটি অভিযানে ৯৮০ কেজি ভারতীয় চা জব্দ করে সিআইডি। এ সময় আজগর নামে আরেক পিকআপ চালককে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে সিআইডি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, গত একমাসে সিআইডি’র অতর্কিত অভিযানে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় পণ্য ও গরু আটক করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসল্ট মামলার আসামিদের গ্রেফতারে থানা পুলিশ কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না।
ঘটনার পর সিআইডি সিলেটের পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাঁধা প্রদান, হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অপরাধে এসআই দ্বীরাজ ধর প্রিন্স বাদি হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেয়া আসামি পিকআপ চালক ধলাইসহ ৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮০/৯০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়। মূলত সিআইডি কর্তৃক গত ১ মাসে বেশ কয়েকটি অভিযানে মাদকসহ চোরাই মালামাল ও ভারতীয় গরু উদ্ধারের পর মামলা দেয়া হয়। এতে মাদক চোরাচালানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সিআইডি পুলিশের অভিযান রোধকল্পে হামলা চালায়।
এছাড়া ভারতীয় চোরাই চাপাতাসহ আটক চালক আজগর এবং অপর ৮ জনের নামোল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। হামলার ঘটনার পরদিন হ্যান্ডকাপ উদ্ধার হলেও এখনো আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
গত ১৪ অক্টোবর সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওইদিন ভোররাত ৪টার দিকে প্রথম অভিযানে একটি ডিআই পিকআপ তল্লাশী চালিয়ে ১৪টি বস্তায় ৭০ কেজি করে ৯৮০ বস্তা ভারতীয় চাপাতা জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অভিযানকালে চাপাতার বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আজগর আলী (৩৫) নামে পিকআপ চালককে আটক করা হয়। তিনি উপজেলার হেমু দত্তপাড়া এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামী স্বীকার করেন, চোরাকারবারীদের সহযোগিতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে ভারতীয় চাপাতা দেশের অভ্যন্তরে আনেন। এ সময় চাপাতাসহ নাম্বার প্লেটবিহীন হলুদ ও নীল রঙের ডিআই পিকআপটি জব্দ করা হয়।
এর আধঘন্টা পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ফোর্স নিয়ে চৌকি বসিয়ে তল্লাশী চালান এসআই দীপরাজ ধর প্রিন্স। এ সময় সিলেট শহরমূখী আরেকটি ডিআই ট্রাক থামিয়ে তল্লাশীকালে চালক চোরাই মালামাল বহনের কথা স্বীকার করে। চালক ধলাই মিয়াকে (১৯) হাতকড়া পরিয়ে গাড়ি তল্লাশীর চেষ্টাকালে কয়েকটি ডিআই পিকআপ ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ৮০/৯০ জনের মাদক চোরাকারবারি দলের সদস্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা হাতকড়াসহ চালক ধলাই মিয়াকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় সিআইডি পুলিশের এক কর্মকর্তা আহত হন। হামলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাত ভেঙে যায়। ছিনিয়ে নেয়া চালক ধলাই মিয়া জৈন্তাপুরের লামা শ্যামপুর এলাকার কাদির পীরের ছেলে।
পরে কর্তব্যকাজে বাঁধা প্রদান, হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হ্যান্ডকাপসহ আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অপরাধে এসআই দ্বীরাজ ধর প্রিন্স বাদি হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় চালক ধলাইসহ ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮০/৯০ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া ভারতীয় চোরাই চাপাতাসহ আটক চালক আজগর ও অপর ৮ জনের নামোল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে সিআইডি।

You might also like