সিলেটে শিশু পুত্র হত্যার দায়ে পিতার যাবজ্জীবন

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটে ১১ মাসের শিশুপুত্রকে হত্যা করে লাশ গুম করার ঘটনায় স্ত্রী’র দায়ের করা মামলায় পিতাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো বিনাশ্রমে ১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। রোববার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম দেলোয়ার হোসেন (২৮)। সে লক্ষীপুর জেলার সদর থানার শাকচর প্রকাশ ভদ্রবাড়ির মো: মোস্তফা মিয়ার পুত্র। বর্তমানে সে খাদিমনগর রুস্তমপুর নাদিয়া ভিলার বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসেন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, লক্ষীপুর সদর থানার চরমন্ডল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের কন্যা বিলকিছ আক্তারের সাথে ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেনের বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে মুরছালিন নামের এক শিশুর জন্ম হয়। দেলোয়ার সিলেটের খাদিমনগর ফুলকলি কোম্পানীর কারখানায় মিষ্টি কারিগরের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। সেই সুবাদে তারা বর্তমান ঠিকানায় বসবাস করে আসছিলেন। ঘটনার দেড় মাস পূর্বে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে বিলকিছকে মারধর করেন দেলোয়ার। এরপর থেকে সাংসারিক বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিলো। ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে দেলোয়ার ১১ মাসের শিশু সন্তান মুরছালিনকে সঙ্গে নিয়ে খাদিমনগর ফুলকলি কোম্পানীর কারখানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। ঐদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে দেলোয়ার সন্তানকে নিয়ে বাসায় ফিরতে না দেখে তার স্ত্রী বিলকিছ আক্তার সন্তানকে খোঁজাখুজি করতে থাকেন এবং স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন দেলোয়ার হোসেন নিজ সন্তানকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে জৈন্তাপুরের ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য হাজী আব্দুস শুক্কুরের খামার বাড়ির পুকুরে শিশুটির লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে পানিতে মুরছালিনের লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ভাসমান শিশুটির লাশ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে, শিশুটির সন্ধান পেয়ে বিলকিছ আক্তার হাসপাতালে গিয়ে মুরছালিনের লাশ সনাক্ত করেন। পুলিশ ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল দেলোয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। পরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় বিলকিছ আক্তার বাদী হয়ে একমাত্র স্বামী দেলোয়ার হোসেনকে আসামী করে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন(মামলা নং- ১৫ (২০-০৪-২০১৯)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর থানার এসআই মো: আজিজুর রহমান বিপি দেলোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১৯৬) দাখিল এবং ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আদালত এ মামলার বিচারকার্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী দেলোয়ার হোসেনকে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে উল্লেখিত দন্ডাদেশ প্রদান করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট এসএম পারভীন ও আসামীপক্ষের রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী (স্ট্রেট ডিফেন্স) ফারজানা হাবিব চৌধুরী মামলাটি পরিচালনা করেন।

You might also like