সিলেট বিভাগের ১৭৪ মৌজা ডিজিটাল ভূমি জরিপের আওতায় আসছে

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ
 ডিজিটাল ভূমি জরিপের আওতায় আসছে সিলেট বিভাগের ১৭৪ মৌজা। এ তালিকায় রয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলাসহ বিভাগের আরো কয়েকটি উপজেলার মৌজা। বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস)-এর আওতায় পরিচালিত হবে এ কার্যক্রম।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে বিভাগের ২০টি মৌজায় স্থাপন করা হয়েছে মৌজা পিলার।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট পটুয়াখালি জেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের একটি মৌজায় বিডিএস-এর কার্যক্রম শুরু হয়। এ জরিপকে বেইজড্ লাইন ধরে সারাদেশে ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আনিস মাহমুদ জানান, যে জরিপ ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে শেষ হবার কথা ছিল; সেই জরিপ শেষ করতে করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ বছর; আবার ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ বছরও সময় লেগে যাচ্ছে। এমনও আছে যে জরিপের সময় মালিক উপস্থিত আছেন, অনেকক্ষেত্রে সেই জমির রেকর্ড তার নাতির কাছে হস্তান্তর করতে হয়।
নির্দিষ্ট কোনো কারণে এমন বিলম্ব হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিলম্বের অনেক কারণ রয়েছে। এই বিলম্ব দূর করতেই কম সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নির্ভুল ও স্বচ্ছ জরিপ হবার পাশাপাশি জনভোগান্তি লাঘব হবে। বর্তমানে কয়েকটি এলাকায় এই কার্যক্রম চলমান আছে; শিগগিরই সিলেট বিভাগের ছাতকেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা ভূমি জরিপ কর্মকর্তা ও জনসাধারণের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাই-উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, এজন্যে সরাসরি ভূমির মালিকদের সাথে এভাবে নিয়মিত সভা করা হবে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (জরিপ) আব্দুল হাই আল মাহমুদ বলেন, আপাতত কিছু এলাকায় পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ডিজিটাল সার্ভে হচ্ছে। এটা সাকসেস হলে পরবর্তীতে তা সকল এলাকায় করা হবে। আমরা ভূমি জরিপে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই।

অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুমিনুর রশিদ বলেন, বলা আছে, যে মৌজার কাজ শুরু হবে, তা ৫ বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু ৫ বছরের জরিপ ৩৬ বছরেও শেষ হয় না। এজন্যই ডিজিটাল জরিপ করা হবে। এতে জমির মালিকদের ভোগান্তির অবসান হবে। আমাদের জরিপ কর্মকর্তাদের কষ্টও কমে আসবে।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মশালা
এদিকে, ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি’’র সভাপতিত্বে ও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ ও বাজেট) শাহরিয়ার মঞ্জুরের পরিচালনায় এতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (জরিপ) আব্দুল হাই আল মাহমুদ ও অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুমিনুর রশিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ আরও বলেন, জরিপ চলাকালে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে এর সমাধান করা যায়। কিন্তু চূড়ান্ত প্রকাশনার পরে কোনো কিছু ধরা পড়লে কেবল ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। প্রতি ৩০ বছর পরপর জরিপ হয়। আগামীতে জরিপ কার্যক্রমের ভুলভ্রান্তি দূর করতে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এজন্য আমরা মাঠপর্যায়ে যাচ্ছি।
শুরুতে সিলেট বিভাগের সেটেলমেন্ট কার্যক্রমের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ওবায়দুল হাসান।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক এমরান হোসেন, সিলেটের রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার মো. জেদান আল মুসা পিপিএম, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এএসএম কাসেম, সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রিয়াংকা পাল, সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মন, গ্রামীণ জনকল্যাণ সংসদের সভাপতি জামিল চৌধুরী, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক হেপি বেগম, সাংবাদিক কাউসার চৌধুরী, বিশ্বম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, জরিপ কার্যক্রম শুরুর সময়ে প্রচারণা কম হওয়ায় জনসাধারণ তেমন জানতে পারেন না। মানুষকে ভূমি জরিপের বিষয়টি বেশি করে জানাতে হবে। এরফলে মানুষ আরও সচেতন হবে। তাদের কেউ কেউ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গা সংরক্ষণের প্রস্তাব দেন। বক্তারা পাঠ্যপুস্তকে ভূমি আইন অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। বক্তারা প্রবাসীদের জমি নিয়ে হয়রানি বন্ধ এবং ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করার ওপর জোর দেন।

You might also like