সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আউটসোর্সিং এ লোক নিয়োগে ‘অনিয়মের’, তদন্ত শুরু
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আউটসোর্সিংয়ে লোকবল সরবরাহে টেন্ডার ছাড়াই বার বার একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। এছাড়াও সিভিল সার্জন অফিসে গড়ে উঠা একটি দালাল চক্র ও কতিপয় কর্মচারী মিলে চলতি অর্থবছরে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও গুরুতর অভিযোগ উঠে।
গত নভেম্বরে এসব বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। ১০ জানুয়ারি বুধবার সেই কমিটি সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে তদন্ত করে। জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়া, ওয়ার্ড বয়, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে ৯৯ জনকে নিয়োগ করা হয়। ঢাকার ‘সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেজে আউটসোর্সিংয়ের লোকবল সরবরাহের কাজ ভাগিয়ে নেয় সিলেটের একটি চক্র। তখন চাকুরি দেয়ার কথা বলে এক-একজন কর্মচারীর কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়া হয়। সিভিল সার্জন অফিসের একটি চক্র দালাল লাগিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের সংগ্রহ করে। এ রকম ৯৯ জনের কাছ থেকে ২/৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা।
দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাসে মাসে কর্মচারীদের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও তা নিয়মিত দেয় না। এমনকি টানা ৭ মাস বেতন না দিয়েই কাজ করিয়েছে এসব কর্মচারীকে দিয়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ দেন। এরপরও পুনরায় টেন্ডার আহবান না করে ২০২১-২২ অর্থবছরে আবারও মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে অনেক কর্মচারী বেতন ভাতা না পেয়ে চাকুরি ছেড়ে চলে যায়। এরপর ওই পদটিও পুনরায় আরও কোনো কর্মচারীর কাছ থেকে ২/৩ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ করা হয়।
সর্বশেষ কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ২০২২-২৩ অর্থবছরের টেন্ডার আহবান ব্যতীত সরকার আউটসোর্সিং নামের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। অনুমোদন পেয়েই কর্মরত কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মূলত ওই টাকাগুলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সার্জন অফিসের সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নেয়।আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের মনোপাড়া গ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে এনামুল হক গণমাধ্যমকে জানান, চাকুরি পাওয়ার আগেই সিভিল সার্জন অফিসের ল্যাব এটেনডেন্ট সেলিম মুন্সীর মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে যোগদান করেন। সারা বছরে তার বেতন ছিলো প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। সেই টাকাই যেখানে উঠেনি, উল্টো বছর যেতে না যেতে অনুমোদনের কথা বলে পুনরায় ৩০ হাজার টাকা নেয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জন্য আবারও টাকা চায়। অথচ টানা ৭ মাস পর্যন্ত বেতন দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এনামুল হক আরও জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামুনুর রশীদ বাবলু পুনরায় ৫০ হাজার টাকা চায়। একপর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা চায়। ওই টাকা না দেয়ায় কোন কারণ ছাড়াই তাকে চাকুরি থেকে বাদ দেয়া হয়।অপরদিকে, সিভিল সার্জন অফিসে জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.-এর কার্যসম্পাদন সন্তোষজনক নয়। মাসের পর মাস বেতন ভাতা না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে এই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস-এর ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সেখানকার আউটসোর্সিং এর কর্মচারীরাও তাদের ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন মাসের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন।এছাড়া প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধানরাও বেতন ভাতা না পাওয়া কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এতোসব অভিযোগ থাকার পরে পুনরায় টেন্ডার ছাড়া বিতর্কিত সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.-এর মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন উঠে।গত নভেম্বরে বিষয়টি নিয়ে যখন গণমাধ্যম সরব হয় তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে রয়েছেন হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক ও সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন। সে কমিটির বুধবার সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত করে। এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করছেন।