সুনামগঞ্জে বিস্ফোরক উদ্ধার প্রধান অভিযুক্ত আফজাল হোসেন গ্রেফতার

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ফেচিরবাজারের দিঘলবাঁক গ্রামে বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আফজাল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাকে গত সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এরআগে আফজলের বাবা ও ভাইকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।জানা গেছে, গত রোববার সকাল থেকে উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ফেচিরবাজারের দিঘলবাঁক গ্রামের মৃত আব্দুস সমিরের ছেলে আখলাকুর রহমানের বাড়িটি ঘিরে রাখে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম এসে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে একটি রিভলবার, একটি ল্যাপটপ, ৯টি মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও পাউডার, ২টি ওয়াকিটকি সাদৃশ বস্তু ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।দিনভর অভিযান শেষে বিকেলে এসব জিনিস উদ্ধারের তথ্য জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক। উদ্ধার পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ৬ জানুয়ারি জগন্নাথপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক নন-এফআইআর মামলা নং-১১৪/২০২২ ও ৩৭৬/২০২২ এর আসামি আফজাল হোসেন (২৫)-এর নামে তার বিরুদ্ধে আদালতের ইস্যুকৃত সমন জারি করতে আসামির বাড়িতে গেলে তিনি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান তিনি। তখন আসামির ঘরের কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সাদা পাউডার ও যন্ত্রপাতি দেখতে পান ওই পুলিশ সদস্য। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর বাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয় এবং গত রোববার অভিযান পরিচালনা করে এসব বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় জগন্নাথপুর থানার উপ-পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আফজল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনায় আখলাকুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে আমজাদুর রহমানকে (২২) সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন পীর মহল্লার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।কে এই ‘বোমা আফজাল’?সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে একটি বাড়িতে পুলিশ সদস্যরা আদালতের একটি নোটিশ নিয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে সেই বাড়ির এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। পরে ঘরের বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সাদা পাউডার ও যন্ত্রপাতি দেখেন পুলিশ সদস্যরা। বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর অভিযান পরিচালনা করে বিষ্ফোরক তৈরির সরঞ্জামাদি ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।কে এই বোমা আফজাল? আফজাল হোসেন (৩৫)। বাবা আখলাকুর রহমান। বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের দিঘলবাঁক এলাকায়। আফজাল পেশায় একজন শীর্ষ অস্ত্রবাজ। একাধিকবার তিনি অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। বেশিরভাগ সময় বসবাস করেন সিলেট নগরিতে। ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার নিকটাত্মীয়।স্থানীয়রা জানান, এলাকায় খুব বেশি থাকতেন না তিনি। মেলামেশা ছিল খুব কম। তবে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকবার। রোববারের ঘটনার পর থেকেই ধীরে ধীরে তার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে শুরু করেছেন।তার এক নিকটাত্মীয় জানান, আফজাল বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্র শিবিরের সঙ্গে। এলাকার মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন না। বেশিরভাগ সময় সিলেটের বাসায় বসবাস করতেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার জগন্নাথপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক আখলাকুর রহমানের ছেলে আফজাল হোসেনের নামে আদালতের ইসূকৃত সমন জারি করতে দিঘলবাঁকের ওই বাড়িতে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আফজল দৌড়ে পালিয়ে যায়।রোববার রাতে এ ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় এসআই জিয়াউদ্দিন বাদী হয়ে আফজল হোসেনকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই রাতে আখলাকুর রহমান (৭০) এবং তার ছোট ছেলে আমজাদুর রহমানকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। এদিকে সোমবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে আফজালকেও গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

You might also like