সুনামগঞ্জে হাসন রাজার ১০০তম প্রয়ান দিবস পালিত

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ লোকে বলে বলে ঘর বাড়ি ভালা না আমার’, ‘ মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্ধি হইয়ারে,,,কান্দে হাসন রাজার মন ময়নারেমহ এমনও অসংখ্য আধ্যাতিক গানের জনক তিনি। ডিসেম্বর মাসেই বাউল সাদক হাসন রাজার জন্মমৃত্যু। আজ ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মরমি কবি, বাউল সাদক হাসন রাজার ১০০তম প্রয়ান দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে । তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে নেই কোন বড় ধরনের আনুষ্টানিকতা। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের এই সাদক পুরুষের জন্ম ও মৃত্যু দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি তার ভক্ত ও সংস্কৃতি কর্মীদের। বাউল হাসন রাজার অমর কীর্তি রক্ষায় তাঁর জন্মস্থান সুনামগঞ্জে হাসন রাজা চর্চা গভেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রেমীরা।

আধ্যাতিক ধ্যান ধারণা, বাউল দর্শন, মরমিবাদ, প্রেম-বিরহ, বৈরাগ্যময় লোকাচার প্রভৃতি হাসন রাজার গানে উঠে এসেছে। তাঁর লেখা প্রায় ৫০০ শত গান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন। ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর(৭ পৌষ ১২৬১) সালে সুনামগঞ্জের শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে প্রখ্যাত দেওয়ান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার। বংশ পরাম্পরায় জমিদার বংশে হাসন রাজার জন্ম হলেও প্রচুর সম্পদ আর প্রার্থিব ঐশ^য্যের মোহ ত্যাগ করে মনোনিবেশ করেন ¯্রষ্টার আনুকুল্যলাভে। এক সময়ের ভোগ বিলাসী জমিদার হয়ে উঠেন প্রজাদরদি দরবেশ জমিদারে। রচনা করেন প্রায় ৫ শতাধিক মরমী গান। তাঁর জীবদ্দশায় ১৯০৭ সালে ২০৬টি গানের একটি সংকল প্রকাশিত হয়। যার নাম ছিল হাসন উদাস। তাঁর অনেক গান সারা বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে। এ পর্যন্ত পাওয়া তাঁর গানের সংখ্যা ৫৫৩টি। অনেকেই অনুমান করেন হাসন রাজার গানের সংখ্যা হাজারের চেয়েও বেশি।১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর রোজ মঙ্গলবার আজকের ঐদিনে মৃত্যুবরণ করেন মরমি সাদক বাউল হাসন রাজা। সুনামগঞ্জের লক্ষশ্রীতে তাঁর মায়ের কবরে পাশে কবর দেয়া হয় তাকে। তার এই কবরখানা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নিজে প্রস্তুত করেছিলেন বলে জানা যায়। শহরের তেঘরিয়া এলাকায় সুরমা নদীর কুল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হাসন রাজার স্মৃতি বিজরিত বাড়ি। যা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছোটে আসেন। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে বিকৃত হচ্ছে হাসন রাজার গানের প্রকৃত কথা ও সুর। তাই হাসন রাজার গান সংরক্ষণে সুনামগঞ্জে হাসন রাজা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতি কর্মীদের।

এ ব্যাপারে মরমী সাধক হাসন রাজার প্রপৌত্র ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেছেন,হাসন রাজা এত বিশাল ধনসম্পদের মালিক হওয়ার পরও তার ঐ সম্পদের প্রতি কোন মোহ ছিল না তিনি সব সময় সাধারনভাবে চলাফেরা করতেন এবং সাধারন মানুষকে নিয়ে আত্মাতিক গান রচনা করে গেছেন। তিনি বলেন এই হাসন রাজা মিউজিয়ামে তার অনেক গান সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে । হাসন রাজার সৃস্মিকে ধরে রাখতে পারিবারিক উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন মরমি সাধকের এই প্রপৌত্র জয়নুল জাকেরীন। সরকারে পৃষ্টপোষকতা পেলে হাসন রাজার রচয়িতা গানকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া ওে সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন হাসন রাজার গান ডিজিটাল পদ্ধতিতে শীল্পকলা একাডেমির আর্কাইভে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

 

You might also like