সুরমা পাড়ের পাইলটিয়ানদের মিলনমেলা টেমস পাড়ে

আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল
সত্যবাণী

লন্ডন:  ‘মুছে যাওয়া স্মৃতি গুলি আমায় যে পিছু ডাকে…’ কিংবা ‘স্মৃতি তুমি বেদনা..’, এই লাইন গুলি প্রত্যেকটি মানুষের মুখে মুখে লেগেই থাকে। আর তা যদি  হয় শৈশবের স্মৃতি তাহলে তো আর কথাই নেই। কারণ নিরবে নিভৃতে শৈশব কৈশোরের স্মৃতির কথা মনে পড়লেই দু চোখ জুড়ে নেমে আসে বেদনার অশ্রু।
এবার বিদ্যালয় জীবনের শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনের স্মৃতি গুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলতে, ‘প্রবাহের স্রোতে, এসো মাতি উল্লাসে দূর প্রবাসে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রবাসে বসবাসরত সিলেটের সুরমা পাড়ের সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন পাইলটিয়ান এলুমনাই ইউ কে আয়োজন করেছিলো পাইলটিয়ান মিলন মেলা ২০২২।

লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক প্রাক্তন ছাত্রদের উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠানে পুরানো সাথীদের সাথে পুনঃমিলনে চাঞ্চল্য আসে পুরো মিলনায়তনে। কারী একরামুল হকের কোরান তেলাওয়াত ও রিংকু সিংহার পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমে কামরুল আহছানের পরিচালনায় প্রয়াত প্রাক্তণ শিক্ষক ও ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। রিংকু সিংহার তত্তাবধানে জাতীয় সংগীত এর পরপরই পরিবেশিত হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রদের উদ্যোগে মিলন মেলার সংগিত।
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আদলে নির্মিত ফটকের পাশাপাশি শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে ছিল ক্যারম বোর্ড, চানাচুর, চটপটি কিংবা ফুসকার ব্যবস্থা। চানাচুর, ফুসকার পাশিপাশি চলছিল জম্পেশ আড্ডা। এক পর্যায়ে প্রাক্তন ছাত্র ও সাংবাদিক মোঃএমরান আহমেদ এর পরিচালনায় মিলন মেলা উপলক্ষে উন্মোচিত হয় স্মরনিকা ‘প্রবাসে প্রবাহ’এর মোড়ক। প্রাক্তন ছাত্র ও এটিএন বাংলার হেড অব মার্কেটিং মোঃআদিল চৌধুরীর পরিচালনায় সম্মাননা জানানো হয় মিলন মেলার সকল স্পন্সর ও বিজ্ঞাপন দাতাকে। ২০১৬/১৭ সালে সদ্য প্রাক্তন ছাত্রদের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয় প্রাক্তন ছাত্র ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন সময়ে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পুরো পাকিস্তানের সর্বাধিক নাম্বার প্রাপ্ত মোঃ আব্দুর রকিবকে। গান নাচ আর কবিতার ফাঁকে ফাঁকে সম্মান জানানো হয় পাইলট এলুমিনাই এর পক্ষ থেকে প্রথমবার মিলন মেলা আয়োজন কারী মিজানুর রহমান মিজান, সুয়েব আদমজী, তৌহীদ ফিতরাত হুসেইন, শাহেদ শামস, মোহাম্মদ একরাম সিদ্দিক উজ্জ্বল ও মোহাম্মদ শামসুল করিম টিটুকে।
মাহবুব শুভ ও আব্দুল হাফিজ শিপলু, আবু আরেফ, নজরুল ইসলাম ও মঞ্জুর চৌধুরী এর ব্যবস্থাপনায় মধ্যান্য ভোজনের সময় ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিটি টেবিলে টেবিলে গিয়ে মাহমুদ হাছানের নবীন প্রবীনের পরিচয় পর্বটি ছিল প্রশংসনীয়।
ইমরান চৌধুরী, আব্দুল ফাত্তাহ চৌধুরী রানা ও আব্দুল্লাহ ফাতেনীর তত্তাবধানে র‍্যাফল পরিচালনা ছিল অভুতপূর্ব। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে র‍্যাফেল ড্র পরিচালনা করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক সায়েক আহমেদ সওদাগর।
মোহাম্মদ আখলাকুর রহমান ও মেকদাদ খানের তত্তাবধানে মিলন মেলায় আগত সকল প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে উপহার হিসেবে মিলন মেলার লগো সম্বলিত ব্যাজ মগ, চাবি রিং, ব্যাগ ও কলম প্রধান করা হয়। সঞ্জিত দাশের সহযোগীতায় ও আশরাফুল ওয়াহিদ দুলালের পরিচালনায় সারাদিনব্যাপী অনুষ্টানের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় পর্দার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভিডিও স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় কবি জিয়াউর রহমান সাকলায়েনের কন্ঠে পৃথিবীর সব বাবাদের উদ্দ্যেশ্যে বাবা কবিতাটি প্রদর্শন এর সময় ছল ছল চোখে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা অতীতে।প্রদর্শিত হয় স্কুলের বিভিন্ন চিত্র।
রাতব ৮ ঘটিকার সময় ব্রিটেন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্রিটেনের রাণী ২য় এলিজাবেথ এর মৃত্যুতে তার প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
মোঃসাকিব আলম চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ জাহিদ, আবিদুর রহমান, আব্দুল্লাহ নাইম, মাহফুজুর রহমান তায়েফ, আযহার উদ্দিন, শামাম আহমেদ, অপু তালকদার, মাহমুদুল হাছান চৌধুরী, শহনেওয়াজ সুবান, রাজা, রেজোয়ান, আদনান, মোহাম্মেল প্রমুখ যখন সেচ্ছা সেবক তখন নেই কোন নেতৃত্বের বাহাদুরি, নেই কোন উশৃংখলতা।নবীন প্রবীণদের এই মিলনে উপস্থিত বয়সের ভারে নুয়ে পরা প্রবীণরা যেন তালে তাল মিলেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা শৈশবে। তাই তারা আয়োজক উত্তরসূরীদের প্রশংশা করতে কুন্ঠা বোধ করেন নি।
সর্বপরি সুরমা পাড়ের সন্তানরা যখন টেমসের পাড়ে মিলন মেলায় শৃঙ্খলা ও শ্রদ্ধা ভালবাসায় সবাইকে আবদ্ধ করলেন তা ছিলো চোখে পড়ার মতো। একে আপরের প্রতি শ্রদ্ধা সরূপ তারা তাদের সহপাঠী এই অনুষ্ঠানের অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদ হাসান কে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে সম্মাননা জানাতে কার্পন্য করেন নি।
দিন শেষে রাত যখন আসে তখন বিদায়ের প্রাক্ষালে যান্ত্রিক জীবনের একটি দিন পুরানো সহপাঠীদের সাথে কাঁঠিয়ে বিদায় বেলা বিষাধ মনে অশ্রুসিক্ত নয়নে যেন সবাই মনে মনে বলছিলেন, এই দেখা যেন শেষ দেখা না হয়, আবার দেখা হবে বন্ধু।

You might also like