স্পেনে ভিন্ন পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত

স্পেনে ভিন্ন পরিবেশে পবিত্র ঈদুুল ফিতর উদযাপন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্যান্য বছরের মতো বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই এবার প্রাণঘাতী করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাদামাটাভাবেই ঘরে বসে ঈদ কাটছে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের।এখানে এবারের ঈদ হচ্ছে ঘরে বন্দী থেকেই।স্পেনে লকডাউনের শিথিলতা থাকলেও জনসমাগম করে ঈদের জামাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারণ স্পেনে লকডাউন ৭ জুন পর্যন্ত চলবে। ঈদের জামাত আদায়ের জন্য মসজিদ কিংবা খোলা মাঠে অনুমতি ও দেয়া হয়নি। ১০ জনের অধিক লোক জমায়েত হওয়ার ও অনুমতি নেই ।আল্লাহ আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠেনি খোলা মাঠ কিংবা মসজিদের চারপাশ।তবে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আস সুন্নাহ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় সেখানে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়। দীর্ঘ দুই মাসের বেশি লকডাউন থাকার পর তা শিথিল হলে চলতি সপ্তাহে টেনেরিফ দ্বীপে স্থানীয় মসজিদটি খুলে দেয়ার অনুমতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

মসজিদ খোলার পরপরই শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের করে দ্বীপে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এরপর রোববার (২৪ মে) মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ ও আদায় করে।সরকারের নির্দেশনা মেনে জনসমাগম এড়াতে মসজিদে পরপর চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টা ৪০ মিনিট, দ্বিতীয় জামাত ৮টা ২০, তৃতীয় জামাত ৯টা এবং সর্বশেষ জামাত হয় ৯টা ৪০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিটি জামাত আদায় করেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসীরা।সরকারি নিয়ম অনুসারে স্পেনে মাস্ক বাধ্য করা হয়েছে। ফলে প্রতিটি মুসল্লীকে মাস্ক নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদে বাইরে ছিল প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা।সেখানকার বাসিন্দা ফরিদ হাসান খান জানান, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দুই মাসের বেশি মসজিদ বন্ধের পর চলতি সপ্তাহে মসজিদ কমিটির সার্বিক প্রচেষ্টায় মসজিদটি খোলার অনুমতি দেয়া হয়। মসজিদটিতে সবাই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। অন্যদিকে একটু খারাপও লেগেছে। আত্মীয়-স্বজনরা দূরে এবং আগের মতো সেই আনন্দ পাইনি। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।

স্পেনে সর্বচ্চো সংখ্যক বাংলাদেশী বসবাসকারী রাজধানী মাদ্রিদ ও পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় এবং অন্যান্য শহরে এবার ঈদুল ফিতরের কোনো জামাত অনুষ্ঠিত না হলেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরেই পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। এ বছর কারও বাসায় কেউ গেলেন না। হলো না ঈদের কোলাকুলি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া এবং আত্মীয়-প্রতিবেশিদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করা। ঈদের জামাত ও জামাত পরবর্তী কোলাকুলি ছাড়াই নিষ্প্রাণ ঈদুল ফিতর উদযাপন করলেন সেদেশে বসবাসরত অন্যান্য অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ঘরের বারান্দায় বসে বাইরের দিকে থাকিয়ে রেমিট্যান্সযোদ্ধা সাহের আহমদ বলেন, ঘরেই ঈদের নামাজ আদায় করলাম। জানি না আর কতদিন এভাবে বসে থাকতে হবে। বাইরে বের হলেই জেল-জরিমানা। কর্মহীন ছন্দপতন ছাড়াই ঈদের দিনটা নিরানন্দেই কাটবে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক বলেন, ঘরেই পরিবার ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঈদের উৎসব করছি। ভিডিও কলে স্বজনদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া হলো না এটা অকল্পনীয়। সারা মাস আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি।

করোনা মহামারি সংকট ও পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়েছেন। অর্থনৈতিক সংকটে তারা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। অনিশ্চিত সময়ে বছর ঘুরে আসা চিরচেনা ঈদের আবহে তারা ছন্দ মেলাতে পারছেন না।প্রতি বছরের মতো এবার পরিবারের জন্য দেশে টাকাও পাঠাতে পারেননি বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি। প্রিয় পরিবারকে ঈদের টাকা না পাঠাতে পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশি ও স্প্যানিশ নাগরিকসহ সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার। তিনি দেশে অবস্থিত প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এই মহাদুর্যোগের সময়ে যে কঠোর জীবন-যাপন পদ্ধতি চলছে এর মধ্যেও ধর্মপ্রাণ প্রবাসী ভাইবোনেরা এক মাস রমজানের রোজা রেখেছেন এবং এক মাস সিয়াম সাধনার পরে এসেছে ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে প্রবাসীরা নিয়মকানুন পালন করে ঈদ উদযাপন করছেন।তিনি বলেন, এখন এক কঠোর ও অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছে গোটাবিশ্ব। এমন খারাপ সময় থাকবে না, আমাদের সুদিন আসবেই।

You might also like