৫ দফা দাবিতে সিলেটে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট বুধবার প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের আহ্বানে তাঁর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। তবে এই সময় কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। বৈঠকের বিষয়টি মঙ্গলবার ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা আলী আকবর রাজন।তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ১২টায় তাঁর কার্যালয়ে বৈঠকে বসবো। তবে আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। বৈঠকে বসে আমরা আমাদের দাবিগুলো আবারও উত্থাপন করবো। যদি তাৎক্ষণিক মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো পূরণের আশ্বাস দেয়া হয় তবে বৈঠক শেষে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

প্রসঙ্গতঃ পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। যদিও কর্মবিরতি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কর্মবিরতি গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।৫ দফা দাবি হলো সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও উপ-কমিশনারকে (ট্রাফিক)-এর অপসারণ, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও রেকার বাণিজ্যসহ মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ করা, সিলেটে শ্রম আদালতের প্রতিনিধি শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারকারী নাজমুল আলম রোমেনকে প্রত্যাহার করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া, ভাঙাচোরা রাস্তাগুলোর দ্রুত সংস্কার এবং নতুন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ ও বিক্রিত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়া। এছাড়া অনুমোদনহীন গাড়ি যেমন অটোবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ডাম্পিং করা গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।এদিকে, ৫ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর রোববার সিলেটের ৬টি রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সভায় ধর্মঘটের এ ঘোষণা দেয়া হয়। কর্মসূচি চলাকালে ভোর থেকেই সিলেট থেকে দূরপাল্লার কোন গাড়ি ছেড়ে যায়নি বা সিলেটেও প্রবেশ করেনি। আভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িগুলোও যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিস, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া জনসাধারণ।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রাইড শেয়ারিং-এর বাহনগুলোকেও পরিবহন শ্রমিকদের আটকে দিতে দেখা গেছে। সুযোগে রাইড শেয়ারিং-এর বাহনগুলোও যাত্রীদের পকেট কাটতে তৎপর হয়ে উঠে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনৈক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন সকালে আমাদের কর্মস্থলে যেতে হয়। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের ফলে বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হচ্ছে। এতে সুযোগ বুঝে যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে উবার আর পাঠাও-এর চালকরা।সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, আমাদের ৫ দফা দাবি মানা না হলে আমরা আরো কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবো। মঙ্গলবার থেকে শুধু সিলেট জেলায় ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে সিলেট বিভাগ জুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।এদিকে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার কথা জানান সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মঈনুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। অথচ প্রায় ১৫ দিন আগে আমরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে আমাদের দাবির ব্যাপারে অবগত করেছি, কিন্তু আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে কর্মসূচির আগের দিন। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করে বলা হয়েছে, বুধবার আলোচনায় বসার জন্য। তাই আমরা জানিয়ে দিয়েছি, তাহলে কর্মসূচি চলবে। আলোচনায় বসতে হলে ওইদিন বসে সিদ্ধান্ত পরবর্তী প্রয়োজনে আমরা তাৎক্ষণিক কর্মসূচি স্থগিত করব।
সামনে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হবেন জেনেও তবুও কী কর্মসূচি স্থগিত করা যায় না? জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মঈনুল ইসলামকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে। এর ভেতরে কোন সমাধান না আসলে আমরা আমাদের শ্রমিকদের বলে দিবো, যাতে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে কোন সমস্যা না হয়, সে ব্যবস্থা করতে।

এদিকে, জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ ঘোষিত কর্মবিরতি ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে কর্মসূচি চলাকালে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া মনোভাব থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জরুরী কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষজনও। যেকোন গাড়ি দেখলেই পরিবহন শ্রমিকরা দৌড়ে গিয়ে সেটি আটকে দিচ্ছেন। তবে সেই সাথে লাঠিসোটা নিয়ে পিকেটিং করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। সাধারণ মানুষের সাথে তারা অসদাচরণও করছেন।বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অবিরাম পরিবহন কর্মবিরতিতে সিলেটে বাস-ট্রাক কিছুই চলছে না। একইভাবে বন্ধ রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। তবে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, টমটম ও মোটরসাইকেলকে বিধি বহির্ভূতভাবে আটকে দিচ্ছে বিভিন্ন স্থানে পিকেটিংরত শ্রমিকরা। এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের উদ্ধ্যত আচরণের ফলে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের সাথে বাগ-বিতন্ডা করতে দেখা গেছে। শ্রমিকদের এ আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।মাইক্রোবাস যাত্রী শিপন বলেন, পরিবহন কর্মবিরতির নামে গুন্ডামি চলছে। আমরা বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত জরুরী কাজে সিলেট যাচ্ছিলাম। আমাদেরকে তারা লালাবাজারে আটকে দিয়েছে। শ্রমিকরা আমাদের জরুরী প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ওরা আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে।এ বিষয়ে জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (৭০৭)-এর লালাবাজার উপ-কমিটির জনৈক সদস্য বলেন, আমরা শুধু সিএনজি অটোরিক্সা আটকাচ্ছি। এছাড়া আর কোন যানবাহন আটকানো হচ্ছে না বা সাধারণ যাত্রীদের হয়রানিও করা হচ্ছে না। এরপরও যদি আমাদের কোন শ্রমিক খারাপ আচরণ করে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

You might also like