৭১ এর শহীদ সূর্য সন্তানদের স্মৃতির খোঁজে সিলেট স্মৃতি উদ্যানে প্রবাসী প্রজন্ম

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সিলেট ব্যুরো চীফ, সত্যবাণী

সিলেট থেকে: শিকড়ভূমির মুক্তির লড়াইয়ে জীবন দানকারী পূর্ব প্রজন্মের শহীদ সূর্য সন্তানদের স্মৃতির খোঁজে সিলেট শহীদ  স্মৃতি উদ্যান পরিদর্শনে গিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটেনে জন্ম নেয়া প্রবাসী প্রজন্মের একটি প্রতিনিধিদল।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময়  দুপুরে ব্রিটেনের প্রভাবশালী টিভি গণমাধ্যম আইটিভি নিউজের সাংবাদিক মাহাথির পাশার নেতৃত্বে লন্ডনে সাংবাদিকতা, শিক্ষা, টেকনোলজি, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত কর্মকর্তা এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস (এলএসই) ও কিংস কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই পরিদর্শনে অংশ নেন।

সিলেটের বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা প্রতিনিধিদলকে নিয়ে স্মৃতিসৌধে গমন করেন ও একাত্তরের এই বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করেন। প্রতিনিধি দলের সাথে উপস্থিত লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের চিলড্রেন এন্ড এডাল্ট এডুকেশন কোর্ডিনেটর সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের তাদের ভাষায় অপূর্ব শর্মার বর্ণিত ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন।

গ্রুপের সদস্যরা এসময় এই বধ্যভূমিতে শায়িত শহীদদের সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। তারা পাকিস্তানী আর্মির নারকীয় নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের বর্ণণা শুনে স্তম্ভিত ও আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেন। প্রতিনিধি দলের সাথে উপস্থিত ব্রিটেনের বাংলা গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক, সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা পাকিস্তানী আর্মির হাতে নিহত ও এই বধ্যভূমিতে শায়িত তাঁর আপন খালু নুরুল হক খাঁনের তথ্য গ্রুপ সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করতে গিয়ে আবেগী হয়ে উঠলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও আবেগ প্রবণ হয়ে জনাব পাশাকে শান্তনা দিতে থাকেন।

মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৫২ বছর পর সিলেটের এই বধ্যভূমিকে স্মৃতিসৌধ আকারে প্রতিষ্ঠিত করায় এর উদ্যোক্তা মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব:) আব্দুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা ড. জিয়া উদ্দিন, ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক কলামিষ্ট নজরুল ইসলাম বাসন ও সাংবাদিক, গবেষক অপূর্ব শর্মাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রুপ প্রধান মাহাথির পাশা বলেন, ৭১ এর দুনিয়া কাঁপানো সূর্য সন্তানদের তৃতীয় প্রজন্মের পক্ষ থেকে আমরা উদ্যোক্তাদের স্যালুট জানাই। এমন ঐতিহাসিক উদ্যোগ ও স্থাপনা মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, মা-বাবার কাছে শোনা গল্প ও ইতিহাসের কিছু রেফারেন্স-মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে এতটুকুই আমাদের জ্ঞান। আজ এই বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধে এসে এরচেয়েও অনেক বেশি কিছু আমরা জানলাম, যেন সান্নিধ্য পেলাম বাঙালির সূর্যসন্তান আমাদের পূর্ব প্রজন্মের।

মাহাথির পাশার মা, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের চিলড্রেন এন্ড এডাল্ট এডুকেশন কোর্ডিনেটর সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা প্রবাসী পিতামাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ছুটিতে দেশে আসলে আপনাদের সন্তানদের নিয়ে এখানে আসুন। যাঁদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই দেশ, তাদের কথা, দেশটির ভূমিষ্টকালীন কষ্টের ইতিহাস সন্তানদের যদি আমরা পরিপূর্ণভাবে জানাতে পারি, তাহলে তারাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমাদের পূর্ব প্রজন্মের এই গৌরবগাঁথা পৌছে দেবে পৃথিবীর অন্ত পর্যন্ত।

প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস এডুকেশন বিভাগের কর্মকর্তা ইরাকী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ আহমেদ আল জারইয়ান, ব্যাংকার নাফিস হক, বিজনেস কনসাল্টেন্ট সাহমাত হক, জারা চৌধুরী, হামিদা উদ্দিন, জেরিন আয়শা হোসেইন, এলএসই স্টুডেন্ড রাফা হক, কিংস কলেজ স্টুডেন্ট ইনায়া আমির ও সৈয়দ ইফফাজ রিশাম প্রমূখ।

 

You might also like