ইউরোপে আবারো বেড়ে চলছে কোভিড সংক্রমণ
শাহ মো:তানভীর
সত্যবাণী
পর্তুগাল থেকে: করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো দেশে নতুন করে লকডাউন দেয়া হয়েছে। নতুন ভাইরাস ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট বি১১৭ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ায় ওইসব দেশের সরকার বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছে।নতুন এই ভাইরাসটি আগের ভাইরাসের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি সংক্রমণ ও দ্রুত মৃত্যুর কারণ।গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচওর ইউরোপের পরিচালক হ্যানস ক্লুজ বলেন,নতুন ধরনের ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত তার রূপ বদল করে শক্তি সঞ্চয় করে দ্রুতই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।জার্মানিতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন এবং মারা গেছেন ৭৫ হাজার লোক। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে স্কুল ও মার্চের দিকে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য খুলে দেয়ার পর জার্মানিতে এখন দৈনিক সংক্রমণ ১৩ হাজারের বেশি।জার্মানি চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল সোমবার ১৬টি স্টেটের গভর্নরদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এ সময় সবাই আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোতে সম্মত হয়েছেন।
জার্মানির যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি সেসব এলাকার স্কুল ও দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যারা ঘরে বসে কাজ করতে পারেন তাদেরকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঘরে থেকেই কাজ করার অনুরোধ করা হয়েছে।ফ্রান্সে মোট সংক্রমণ চার দশমিক তিন মিলিয়ন এবং মারা গেছেন ৯২ হাজার তিন শ’ জন মানুষ। ফ্রান্সের শ্রমমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। তার আগে ফ্রান্সের আরো চারজন মন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট করোনা পজেটিভ হয়েছিলেন।গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জিন ক্যাসেক্স বৃহত্তর প্যারিসসহ ১৬টি বিভাগে একটি আংশিক ‘লকডাউন লাইট’ ঘোষণা করেছিলেন।যেখানে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস। দোকান বন্ধ করা হয়েছে। ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণ এখন ৩০ হাজারের বেশি। অধিক সংখ্যক লোক ইন্টেনসিভ কেয়ারে আছেন। প্যারিসের হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।ইতালিতে গত ১৫ মার্চ থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার লাখে ২৫০-এর ওপরে ওই এলাকাগুলোকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রেড জোনে অবস্থিত স্কুল, বার, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে।দেশটিতে প্রতিদিন সংক্রমণ ২২ হাজারের বেশি এবং তিন হাজার পাঁচ শ’ লোক ইন্টেনসিভ কেয়ারে আছেন।গ্রীস এবং নেদারল্যান্ডে জারি করা হয়েছে রাত্রীকালীন কারফিউ।পোল্যান্ডে বাতিল করা হয়েছে শনি এবং রোববারের সব পাবলিক ইভেন্ট।হাঙ্গেরির হাসপাতালগুলোতে রয়েছে করোনা রোগীর চাপ।বর্ডার বন্ধ করার জন্য জার্মানিকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।তবে এর ঠিক উল্টা চিত্র ইউরোপের পশ্চিমের দেশ পর্তুগালের। লকডাউনের সুফল পাচ্ছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড় সংক্রমণ যেখানে প্রতি লাখে ২৫০-এর বেশি সেখানে পর্তুগালের গড় সংক্রমণ ৯০-এর নিচে।গত ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী লকডাউন চারটি ধাপে তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। জরুরি অবস্থা মে মাস পর্যন্ত বাড়ানোর ইঙ্গিত করেছেন প্রেসিডেন্ট মার্সেলো সোসা।