আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে সিরাতুন নবীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে লন্ডনে জাতীয় সীরাতুন্নবী সম্মেলনে বক্তাগন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ ৮ অক্টোবর শনিবার বিকেলে লন্ডনের ইলফোর্ড হাই রোডে অবস্থিত কলিশিয়াম স্যুট হল মিলনায়তনে আলখায়ের ফাউন্ডেশন ও ইকরা টিভি গ্রুপের উদ্যোগে জাতীয় সীরাতুন্নবী মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম কাসিম রশীদ আহমদ এর বিশেষ আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত এ ব্যতিক্রমধর্মী সীরাত কনফারেন্সে পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা থেকে আগত মসজিদে কিবলাতাইন এর ইমাম ও মসজিদে নববী শরীফ এর উস্তাদ শায়খ আবু ফাহদ ডক্টর আবদুল্লাহ আল বিলাদী প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এ সময় বৃটেনের প্রথিতযশা ইসলামী স্কলার শায়খ রিয়াদুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাণবন্ত ভাষায় উপস্থাপন করেন। ইকরা টিভি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইমাম কাসিম রশীদ আহমদ নবীজীবনের অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্বারগর্ভ আলোচনা পেশ করে আর্ত মানবতার সেবায় ইসলামের সার্বজনীন শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বর্তমান অকল্পনীয় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের কোটি কোটি বিপন্ন অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে মানবিক কারণে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। সীরাত মাহফিলে যৌথভাবে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ইকরা বাংলা টিভির গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপক ও আলোচক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, মুফতি সালেহ আহমদ ও মাওলানা আবদুল বাসিত। মাহফিলে দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের উলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন কমিউনিটির নবীপ্রেমিক জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষনীয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী পুরুষ মহিলাদের অনেকেই মারাত্মক বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য আর্থিক সহযোগিতার ও ওয়াদা করেন। সম্মেলনে প্রথিতযশা উলামায়ে কেরাম ও যুগ সচেতন ইসলামী স্কলারগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র সীরাত ও মহান জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা তুলে ধরে বলেন সামাজিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানব জাতির মুক্তির জন্য আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র সীরাত, সুন্নত ও মহান জীবনাদর্শ পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়নের। ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পেতে সীরাতুন নবীর অনুসরণের কোন বিকল্প নেই। অত এব যুগোপযোগী পন্থায় সীরাতুননবী চর্চার জন্য সর্বত্র উপযোগী পরিবেশ ও মনোরম ক্ষেত্র তৈরি করা নিঃসন্দেহে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। এ দাবি পূরণে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে ইকরা টিভি গ্রুপ ও আল খায়ের ফাউন্ডেশন ইউকের সময়োপযোগী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
আল খায়ের ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ সীরাত সম্মেলনের বাস্তবায়ন কমিটির কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মুফতি আবদুল মুনতাকিম ও মাওলানা ফয়েজ আহমদ। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমাম কাসিম রশীদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহান এ সীরাত সম্মেলনে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্দর জীবনের বৈচিত্র্যময় সর্বোত্তম আদর্শ নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনায় আরো যারা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে ব্রিটেনের শীর্ষ মুরব্বি আলেম শায়েখ মাওলানা আসগর হুসাইন, মাওলানা শায়েখ তরিকুল্লাহ, জাতীয় সীরাতুন নবী কনফারেন্স বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপূরী, বৃটেনের স্বনামধন্য আলেম শায়েখ মুফতি সাইফুল ইসলাম,মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম,মাওলানা শায়েখ ফয়েজ আহমদ, শায়েখ মাওলানা ইমদাদুর রহমান আল মাদানী,মাওলানা মাহফুজ আহমদ প্রমুখ রয়েছেন।
সম্মেলনে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ইকরা বাংলার সি,ই,ও শায়খ কারী হুযায়ফা, ইকরা টিভির প্রেজেন্টার মাওলানা কারী রাইয়ান মাহমুদ, মাওলানা আসাদ ব্রাডফোর্ড, মুফতি আব্দুল মালিক,আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, শায়খ কাজী লুৎফুর রহমান, মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, মাওলানা নাজিম উদ্দিন, মাওলানা মিসবাহুর রহমান হিলালী, মাওলানা মুখলেসুর রহমান, মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাওলানা আখলাকুর রহমান, মাওলানা সাঈদ আলী,হাফিজ মাওলানা এনামুল হক, হাফিজ মাওলানা মোস্তাক আহমদ, মাওলানা মুরসালিন, হাফিজ কাজী আব্দুর রহমান, মুফতি ওয়াইস আহমেদ, মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, হাফিজ মাওলানা নাজমুল হুদা, মাওলানা আব্দুল কাহির, মাওলানা আবুল মনসুর, মাওলানা সাইদুর রহমান,হাফিজ ওয়ালিদ রহমান প্রমুখ অন্যতম। সীরাত মাহফিলে ইসলামী চিন্তাবিদগ তাদের বক্তব্যে বলেন, পৃথিবী যখন ঘোর আশানিশায় আচ্ছন্ন ছিল, চারদিকে ছিলো অন্ধকারের কালো থাবা। অন্যায়-উৎপীড়ন, অনিয়ম-অবিচার, জুলুম -অত্যাচারের জাতাঁকলে পিষ্ট ছিলো সমাজ জীবন। বাহুবল ও পেশিশক্তি সেখানে শেষ কথা। ক্ষমতার জোর ও প্রতিপত্তির দন্ডের কাছে ডুকরে কেদেঁ উঠতো মানবতা। অধিকারহারা মানুষের চাপা আর্তনাদ বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে ছিলো। বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেনীর অষ্ফুট স্বর শোষকের গর্জনের কাছে ক্ষীণ হয়ে আসতো। এমনি একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে মুক্তি ও নাজাতের চিরন্তন বাণী নিয়ে ধুলির এ ধরায় শুভাগমন করেন আল্লাহর শেষ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
কোটি কোটি বিশ্বাসী মানুষের বুকের গহিনে তাঁর বসবাস। লাখো-কোটি দরুদ বর্ষিত হচ্ছে তারঁ শানে। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে প্রতি মুহূর্ত। প্রিয় নবিজির পুরো জীবনটা দুনিয়াবাসীর কাছে উন্মুক্ত বই। তারঁ জীবন-পৃষ্ঠা উলটিয়ে যা ইচ্ছ আমরা পড়তে পারি, শিখতে পারি। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মণি-মুক্তোয় ভরপুর। এই মহামানবের সমগ্র জীবন আমাদের হিদায়াতের পথ ও পাথেয়। পৃথিবীর সকল সেলিব্রেটি অন্তত কিছু না কিছু একান্ত ব্যক্তিগত বলে গোপন করে।কিন্তু
সবকিছুই তিনি উন্মুক্ত করেছেন উম্মতের জন্য। নবিজির বহির্জীবন নিয়ে বলেছেন সাহাবিগণ, ঘরের জীবন নিয়ে বলেছেন উম্মুল মুমিনিন। তারাঁ নবিজির জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করেছেন এবং সেগুলো দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এমনভাবে নবিজিকে রেকর্ড করা হয়েছে যে, সাড়ে চোদ্দোশো বছর পরেও মনে হয় যেন,তিনি এই তো কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যে চলে গেলেন।
আমাদের ধ্যান-জ্ঞান, সর্বোচ্চ ভালবাসা এবং আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু উসওয়াতুন হাসানা প্রিয় নবিজি। নবীজির পরিপূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির ইহকালীন মুক্তি এবং পারলৌকিক নাজাত। অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান এই পৃথিবীতে আজ বড় বেশি প্রয়োজন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণের। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবতার ঐক্য শান্তি সংহতি ও সমৃদ্ধির সুপ্ত রহস্য ।