স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে নির্মূল কমিটির আলোচনা সভা

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ১০ এপ্রিল ২০২৩ বিকেল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার কক্ষে (দোতলায়) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৫২তম বার্ষিকী’ উপলক্ষে “’৭১-এর গণহত্যার প্রথম স্বীকৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার দলিল” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ’৭২-এর সংবিধানের অন্যতম রচয়িতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, ‘১০ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার গঠন করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হয়। এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি ছিলেন স্বাধীনতাকামী, যে কারণে ইয়াহিয়া খান বলতেন, শেখ মুজিব বিচ্ছিন্নতাবাদী। বঙ্গবন্ধুর প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা রিপোর্ট পেশ করতো। সেখানে তারা লিখেছে- শেখ মুজিব স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছে। এগুলো দালিলিক প্রমাণ। অথচ অনেকে এখনও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রচার করে। একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যাকে বিকৃতভাবে প্রচার করছে। এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্ট’-এর মত আইন প্রণয়ন করতে হবে।’

‘১০ এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে পালন করতে হবে তিনি বলেন।নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ হচ্ছে স্বাধীনতাকামী কোন দেশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ়োক্তি বা দাবি। এই ঘোষণাপত্র আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা তখনই বৈধতা লাভ করে যখন তা প্রদান করেন দেশের বা জাতির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বা স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতৃত্ব। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জারীকৃত কসোভোর একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা সার্বিয়া যখন আন্তর্জাতিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করে তখন (জুলাই ২০১০) আদালতের রায়ে এই নিরিখে বলা হয়- ‘কসোভোর স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেনি।’

‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন স্বাধীনতাকামী জাতির অবিসংবাদী নেতা হিসেবে, নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি হিসেবে। আন্তর্জাতিক আইন অন্য কাউকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের অনুমোদন করে না। কোনও দেশে কেউ যদি তা করেও থাকেন তার কোন আন্তর্জাতিক বৈধতা নেই। দালাইলামা তিব্বতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ১৯৫৯ সালে। যেহেতু তিনি নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি ছিলেন না সেহেতু তাকে এবং স্বাধীনতাকামী তিব্বতীদের আশ্রয়দানকারী ভারতও দালাইলামার স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি দিতে পারেনি।

‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন করেছেন, যে কারণে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। ‘বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি’ এ কথা বলার অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার করা, আন্তর্জাতিক আইনে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা অস্বীকার করা এবং ইতিহাস অস্বীকার করা। যারা এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।বিএনপি-জামায়াতের বাংলাদেশবিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবার জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ১০ এপ্রিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ দিবস অথবা ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ পালন করতে হবে। একই সঙ্গে বলতে হবে যারা ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অস্বীকার করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী, তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের অযোগ্য। সময় হয়েছে ইউরোপের মতো আইন প্রণয়নের। হলোকস্ট অস্বীকার করা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ’৭১-এর গণহত্যা অস্বীকার কিংবা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করে নতুন আইন প্রণয়ন জরুরী হয়ে উঠেছে।’

You might also like