ব্যবসায়ী-পথচারীরা বিক্ষুব্দ হকারদের দখলে আবারও নগরির ফুটপাত
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ নগরির ফুটপাত আবারও হকারদের দখলে চলে গেছে। ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হেঁটে চলাও যেন দায় হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি একই অবস্থা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী ও নগরবাসী। যে কোন সময় এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী ও নগরবাসী।
ভুক্তভোগীরা জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের কারণে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমে কিছুটা ঢিলে ভাব পরিলক্ষিত হয়। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিসিক নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এরই মধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ৭ নভেম্বর। নগরিতে কার্যতঃ দু’জন মেয়র থাকলেও হকার উচ্ছেদে কেউই উদ্যোগী হচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই সুযোগে হকাররা রাস্তায়-ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে অনেকটা নির্বিঘেœ তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা নগরির প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত কিনব্রিজের উপরে। অপরিসর কিনব্রিজে অবাধে পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছে ভাসমান হকাররা। নগরির ব্যস্ততম আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার ঘুরে হকারদের রাস্তা জুড়ে দিব্যি ব্যবসা করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে তাদের দৌরাত্ম। সিটি কর্পোরেশন এবং রাজা জিসি স্কুলের সামনের রাস্তাতো রীতিমতো কাঁচাবাজারে পরিণত হয়েছে।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব আব্দুর রহমান রিপন জানান, হকারদের রাস্তা দখলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। কিন্তু, এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেকোন সময় বিস্ফোরণ¥ুখ হয়ে উঠতে পারে।এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়। তবে, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান সাময়িক স্থবির হলেও আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে।সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম জানান, নগরির ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হকার উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ সিটি কর্পোরেশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। এসএমপি’র পক্ষ থেকে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান আরো বেগবান করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ এদিকে, নগরিতে হকারদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক এক যুক্ত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘নগরির প্রতিটি রাস্তার দু’পাশ এখন হকারদের দখলে। হকাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে নির্বিঘেœ ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে; অন্যদিকে পথচারীদের চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাতে বসা নিয়ে হকারদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটছে।বিবৃতিতে বলা হয়, ফুটপাতে চলতে গিয়ে নারীরাও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। হকাররা দল বেঁধে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ করে চলেছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিসিকের কোন তৎপরতা না থাকায় ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে একদিকে যেমন নগরির সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটছে। ফলে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে রাখায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু, সদ্যসমাপ্ত সিসিক নির্বাচনের পর সেই তৎপরতা আর চোখে পড়ছে না। আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়রের মেয়াদ থাকলেও তিনি এখন এ ব্যাপারে অনেকটা লাগাম ছেড়ে দিয়েছেন। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এখন হতাশ।বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিক্সার প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও এখন অবাধে এ রাস্তায় রিক্সা প্রবেশ করছে। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ এসব সমস্যা সমাধানে সিসিক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।