দু’দেশের সম্প্রীতির মিলনমেলায় মূখরিত কুশিয়ারার তীর
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ আবেগ-উচ্ছ্বাস চোখের জল আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় শেষবারের মতো তেল-সিঁদুর পরিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জকিগঞ্জ পৌর শহরের কাস্টমঘাটস্থ কুশিয়ারা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
এ উৎসবকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন সীমান্ত ঘেঁষা কুশিয়ারা নদীর দু’পাড়ের নানা ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ। ঢাক-ঢোল, কাঁসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশী এবং শঙ্খের ধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। নদীর দু’তীরে দু’দেশের প্রতিমা বিসর্জন দেখতে অগণিত লোক সমাগম ঘটে। হিন্দু-মুসলিমের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে জকিগঞ্জ শহরের কাস্টমঘাট এবং ভারতের করিমগঞ্জ শহরের কাস্টমঘাটস্থ অখণ্ড মণ্ডলী মন্দিরের আশপাশ এলাকা। কয়েক যুগ ধরে সম্প্রীতির এ উৎসব ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নদীর দুই তীরে এভাবেই চলে আসছে।
প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পুজামন্ডপ থেকে শোভাযাত্রাসহ নেচে-গেয়ে কাস্টমঘাটে এসে প্রতিমা বিসর্জন করেন পূজার্থীরা। বিজয়া দশমীতে পূজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে বিসর্জন ঘাটে সমবেত হন রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জকিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রতিমা বির্সজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সর্তক অবস্থায়। ভারতের করিমগঞ্জেও দেখা গেছে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মঞ্চে উপজেলা পূজা পরিষদ সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজস বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জের ইউএনও একেএম ফয়সাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) আবু সুফিয়ান, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন, জেলা আ’লীগের মানবসম্পদ সম্পাদক বুরহান উদ্দিন আহমদ, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, জকিগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল আহাদ, জেলা পরিষদ সদস্য ইফজাল আহমদ চৌধুরী, থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, ওসি (তদন্ত) দিলিপ কান্ত নাথ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কামরুজ্জামান কমরুসহ জনপ্রতিনিধিগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বক্তারা বলেন, বিশ্ব দরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। আবহমান কাল থেকে আমাদের দেশের মানুষ পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। সরকার সকল ধর্মের মানুষের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। পুরনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে অবদান রাখতে বক্তারা আহবান জানিয়েছেন।
ইউএনও একেএম. ফয়সাল জানান, সর্বজনীন ৯৫ ও একক ৫টি মিলে উপজেলায় সর্বমোট ১শ’ টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন হয়।
থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ জানান, এবার জকিগঞ্জে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে সনাতন ধর্মালম্বীরা জকিগঞ্জ কাস্টমঘাটে প্রতিমা নিয়ে এসে বিসর্জন দিয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও কাস্টমঘাটে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে মঞ্চ স্থাপনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল জকিগঞ্জ পৌরসভা।