ছাতকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সিলগালা ভেঙ্গে দোকান দখলের অভিযোগ
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ আদালতের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সিলগালাকৃত দোকানকোটার তালা ভেঙ্গে দখল প্রচেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ৪ জনকে দায়ী করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভিডিও ফুটেজসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বহুল পরিচিত বাণিজ্যকেন্দ্র জাউয়াবাজারে।
মামলা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ছাতক থেকে সংবাদদাতা জানান, জাউয়াবাজারের একটি দোকানকোটার মালিকানা নিয়ে ব্যবসায়ী মোঃ রওশন খান সাগর এবং প্রতিপক্ষ মো. তারা মিয়া ও গুলনাহার বেগম গংদের মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে। এর জের ধরে সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর বিবিধ মামলার (মামলা নং-১৯৮/১২) শুনানী শেষে দোকানকোটা ক্রোকের নির্দেশ দিয়ে ক্রোককৃত দোকানকোটার দায়িত্ব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট সমজিয়ে দেন। আদালতের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরেজমিন উপস্থিত হয়ে দোকানকোটা সিলগালা করেন।
আদালতের নির্দেশে সরকারি সিলগালাকৃত বর্ণিত দোকানকোটা তত্বাবধায়কদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে স্থানীয় কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী যোগসাজশের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সিলগালাকৃত দোকানকোটার তালা ভেঙ্গে নিজেদের দখলে নেন। খবর পেয়ে মামলার বাদী রওশন খান সাগর পরদিন আদালতকে বিষয়টি অবগত করলে আদালত ছাতক থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ওসির নির্দেশে থানার এসআই বাবুল চন্দ্র পাল তদন্তপূর্বক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিরপেক্ষ স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অবৈধ দখল প্রচেষ্টার সত্যতা পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে স্থানীয় পাইগাঁও গ্রামের মৃত চমক আলীর ছেলে নুরুল আলী, খিদ্রাকাপন গ্রামের খালিক মিয়ার ছেলে হিরক মিয়া, পাইগাঁও গ্রামের খুরশিদ আলী ছেলে আশিষ ওরফে আশিক, প্যাটলি গ্রামের মৃত তারুজ আলীর ছেলে আবদুল কুদ্দুসকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছেন। গত ২১ নভেম্বর ছাতক থানার ওসির অনুমোদনে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি সুনামগঞ্জ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ব্যবসাবহুল একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র। উপরোক্ত ঘটনার সাথে জড়িতরাসহ আরো বড় একটি চক্র প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিবর্গের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছে। এসবের পরিণতিতে গডফাদারসহ এদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন থানায় অপরাধমুলক বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
অভিযুক্ত হিরক মিয়ার বিরুদ্ধে ছাতক থানায় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর এফআইআর নং-১০, ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর এফআইআর নং-২৮, ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর এফআইআর নং-৭ এবং সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ২০২২ সালের ২মে এফআইআর নং- ৮/১০১, কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর এফআইআর নং-২৮ এবং সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ২০২২ সালের ২মে এফআইআর নং ৮/১০১ উল্লেখযোগ্য। এ চক্রের অন্যতম সহযোগী পাইগাঁও গ্রামের মৃত ঠাকুর মিয়ার ছেলে কবির আহমদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় বিভিন্ন ধারায় ২০০৮ সালের ২মার্চ তারিখে দায়েরি এফআইআর নং-৩ চলমান রয়েছে এবং সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ২০২২ সালের ২মে এফআইআর নং-৮/১০১ চলমান রয়েছে।
এছাড়াও এই অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় জাউয়াবাজারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র সমান্তরাল নতুন সংস্থা তৈরী করে অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতি প্রদান, বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টকে অন্যায়ভাবে নাজেহাল, পরিবহন সেক্টর, মাদক ব্যবসায়ীর পাশাপাশির বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জবরদস্তিমুলক চাঁদাবাজিসহ খুন, হত্যাপ্রচেষ্টা, অবৈধ জমি দখল, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানো ও জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নিরাপত্তাহীনতার কারণে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাউয়াবাজার এলাকায় যত অপরাধ সংঘটিত হয়, এসব ঘটনার পিছনে একজন বয়েসী গডফাদারের হাত রয়েছে।
ভূক্তভোগীরা মনে করেন, জাউয়াবাজার এলাকার বিদ্যমান অপরাধ নির্মূল করতে হলে এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।