মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির স্মারক পত্র প্রদান
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ আজ ২৮ মার্চ ,বেলা ১টায় নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন-এঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকপত্র প্রদান করেন এবং আগামী ৩ মে (২০২৪) নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করার আমন্ত্রণ জানান।প্রতিনিধি দল ১৯৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মন্থরতা নিরসনে উচ্চতর আদালতে অধিক সংখ্যক বিচারকপতি নিয়োগ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিনকে স্মারকপত্র প্রদান করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রদত্ত স্মারকপত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচারের গুরুত্ব এবং বর্তমান অচলাবস্থা উল্লেখ করে বলা হয়- ‘ আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি- ২০১৫ সালে বিচারপতি এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের চলমান বিচারের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মন্থরতা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে। তিনি প্রথমেই দুটি ট্রাইব্যুনালের ভেতর একটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন এবং বিচারিক কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। নির্মূল কমিটি এবং সমমনা অন্যান্য নাগরিক সংগঠনের প্রবল বাধার কারণে বর্তমান ভবন থেকে ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলেও এই সব মামলার আপিল শুনানি তিনি বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে যে গতিতে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল সেখানে শুধু ভাটাই পড়েনিÑ একরকম স্থবির হয়ে গিয়েছে। এর ফলে আপনজনদের হত্যার বিচার না পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সদস্যরা সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করছেন, অন্যদিকে গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীরাও শাস্তি না পেয়েই মারা যাচ্ছেন, যা আইনের শাসনের শুধু পরিপন্থী নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও মর্যাদার প্রতিও আঘাতস্বরূপ।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি নিজেও একসময় বিচারক ছিলেন। এই বিচারের গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি সম্যক অবগত আছেন। ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তি হিসেবে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় গণহত্যাকারী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীর বিচার করলেও এখন পর্যন্ত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সংগঠনসমূহ এবং ’৭১-এ পাকিস্তানি হাইকমান্ডের বিচার কার্যক্রম আরম্ভ হয়নি। বিরাজমান এই সংকট নিরসনের জন্য আপনার নিকট আমাদের বিনীত নিবেদন’৭১-এর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মন্থরতা নিরসনের প্রয়োজনে উচ্চতর আদালতে অধিক সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এ বিষয়ে আমরা গত ২৪ জানুয়ারি (২০২৪) বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতিকেও স্মারকপত্র প্রদান করেছি’
স্মারকপত্রে আরও বলা হয়- ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার বিরুদ্ধে, বর্তমান সরকারের যাবতীয় অর্জনের বিরুদ্ধে এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা বাংলাদেশের মূল সংবিধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার ও বিষোদ্গার অব্যাহত রেখেছে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ, কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার প্রয়োজনে আমাদের মূল সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তানে রূপান্তরের জন্য ধর্মের নামে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে পাকিস্তানপন্থী ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বাংলাদেশে পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে, যার ভয়াবহ পরিণতি আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত চক্রের নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসমূহে।
২০০৯ সালের ৬ মে উচ্চতর আদালতের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলী তদন্তের জন্য আপনার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছিল, যা ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিশন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত এতদসংক্রান্ত সংবাদ পর্যালোচনা সহ সরেজমিনে তদন্ত করে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে প্রায় ১৪০০ পৃষ্ঠার যে প্রতিবেদন সরকারকে প্রদান করেছি সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে সাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদন এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত বলে আমরা মনে করি।… কমিশনের প্রতিবেদনে যে সব সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমাদের সংবিধানে বর্ণিত হয়েছে তা বহুলাংশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।