অরিত্রীর আত্মহত্যা : দুই শিক্ষকের জামিন বাতিল

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষাথী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষিকার জামিন বাতিল করেছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।রোববার (২৩ আগস্ট) ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলমের আদালতে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন দুই শিক্ষিকা আদালতে উপস্থিত হননি এবং তাদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আদালত জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া দুই শিক্ষিকা হলেন- ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিন্নাত আক্তার।

এদিকে আজ অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আদালত আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার এসব তথ্য জানিয়েছেন।একই মামলায় গত ২৫ নভেম্বর অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী সাক্ষ্য দেন।অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অরিত্রির বাবার অভিযোগ, ২০১৮ সালের বছর ২ ডিসেম্বর আমার মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী (১৪) ভুলবশত বাসার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন স্কুলে নিয়ে যায়। সেদিন তার সমাজ পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার শেষে দিকে শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, পরদিন স্ত্রী বিউটি অধিকারীসহ স্কুলে যাই। শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা আমাদের অধ্যক্ষের রুমের সামনে অভিভাববদের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে পরে ১১টার দিকে শাখা প্রধান জিনাত আক্তারের রুমে নিয়ে যায়।

আমাদের নিয়ে যাওয়ার পরই তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনার মেয়েকে টিসি দিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা তিনজনই অরিত্রীর অপরাধ ক্ষমা করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করি। সে বলে, ডিসিশন হয়ে গেছে টিসি দিয়ে দিবো। এরপর আমরা সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের কাছে যাই। উনার রুমে গিয়েও মেয়ের জন্য ক্ষমা চাই এবং পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চাই। তিনি আমাদের সামনে অরিত্রীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এ কথা বলার সময় দিলীপ অধিকারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্না করতে করতে বলেন, কিন্ত ক্ষমা চাওয়ার পরও তিনি আমাদের রুম থেকে বের করে দেন।

পরে আমরা আবারও তার রুমে যায়। তখন তিনি আমাদের বলেন, আবার কেন ঢুকছেন? এর কিছুক্ষণ পর দেখি অরিত্রী সেখানে নেই। স্কুলে খোঁজাখুজি করি না পেয়ে বাসায় এসে অরিত্রীকে পাই। দুপুর একটার দিকে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। বিকেল ৩টার দিকে আমার স্ত্রী আমাকে ফোন দেয়। বলে, অরিত্রী রুম খুলছে না এবং রুম ভেতর থেকে আটকানো। তখন আমার স্ত্রীকে বাসার কেয়ার টেকারকে ডাক দিতে বলি। কেয়ার টেকারসহ সকলে দরজা খোলার চেষ্টা করে।পরে ভেন্টিলেটর দিয়ে কেয়ার টেকার রুমের ভেতরে ঢোকে এবং দেখে অরিত্রী সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। শিক্ষিকা অরিত্রীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে এবং ওর সামনেই আমাদের অপমান করায় সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে।এরপর গত বছর ২০ মার্চ দুই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। আসামিদের নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণে অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছর ১০ জুলাই এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

You might also like