শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের আয়োজনে ‘আমি কি ভুলিতে পারি’ : গান, কবিতা ও স্মৃতিচারণে স্মরিত হলেন গাফ্ফার চৌধুরী
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও হামিদ মোহাম্মদ
সত্যবাণী
লন্ডনঃ গান, কবিতা ও স্মৃতিচারণে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরিত হয়েছেন অমর একুশের গানের রচয়িতা, কিংবদন্তী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। রবিবার স্থানীয় সময় বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার ইউকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এই স্মরণ অনুষ্ঠান।
শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার ইউকে’র অন্যতম সংগঠক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মী মাজহারের সঞ্চালনায় ‘আগুনের পরশমনি ছোয়াও প্রাণে…’ রবীন্দ্র সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। এরপর শুরু হয় গাফ্ফার চৌধুরীকে নিয়ে খন্ড খন্ড স্মৃতিচারণ। স্মৃতিচারণের শুরুতেই বাবাকে নিয়ে কথা বলেন গাফ্ফার চৌধুরী তনয়া তনিমা চৌধুরী।
স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয় কবিতা ও গান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।
গাফ্ফার চৌধুরীকে স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মাকে সবাই সাধারণত ‘খালাম্মা’ ডাকতেন, কিন্তু আবদুল গাফফার চৌধুরী ‘আপা’ ডাকতেন। তখনকার সময়ে যারাই আমাদের বাসায় যেতেন সবাই ছিলেন আমাদের পরিবারের সদস্য। তিনি গাফ্ফার চৌধুরীকে বাঙালির ইতিহাসের ‘সূর্যসন্তান’ আখ্যায়িত করে বলেন, বাংলাভাষা ও বাঙালি যতদিন থাকবে, ততদিন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর নামও অমর হয়ে থাকবে।’
স্মৃতিচারণে অংশ নেন বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীন সংগঠক সুলতান শরীফ, মুক্তিযোদ্ধা খলিল কাজি ওবিই, বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক উদয় শংকর দাশ, জনমত সম্পাদক, সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা, জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, ডাঃ মোখলেসুর রহমান, অজন্তা দেব রায় ও দিলু নাসের।
স্মৃতিচারণে বক্তারা নানা অভিধায় তাকে স্মরণ করেন। স্মরণানুষ্ঠানে আবদুল গাফফার চৌধুরীর করোনাকালে রচিত কবিতা ‘মহাজীবনের গান’ ভিত্তি করে সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা নির্মিত আবৃত্তির একটি ‘তথ্যচিত্র’ প্রদর্শিত হয়। এতে আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিকার সৈয়দ হাসান ইমাম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, ডালিয়া আহমদ, উর্মি মাজহার, রবি শংকর মৈত্রী, সতত সুপ্রিয় রায়, মুনিরা পারভীন, মালা সরকার। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত সংযোজন করায় আবৃত্তিটি অনবদ্য হয়ে ওঠে।
এছাড়া আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রয়াণের পর আবদুল গাফফার চৌধুরীর ঘনিষ্টবন্ধু লেখক সাংবাদিক মোনায়েম সরকার তাঁর অনুভুতি থেকে ‘কালজয়ী কলম যোদ্ধা’ নামে একটি মর্মস্পর্শী কবিতা লেখেন। এই দরদী কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান বাচিকশিল্পী মুনিরা পারভীন।
শোকাবহ বিজড়িত স্মৃতি জাগানিয়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন হিমাংশু গোস্বামী, লুসি রহমান, শাহনাজ সুমী, শম্পা কুন্ডু, শুভ্রা মোস্তফা, অমিত দে ও সনজয় দে। আরো কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার তৌহিদ শাকীল, শহিদুল ইসলাম সাগর ও স্মৃতি আজাদ।
ব্রাডি আটর্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ দীর্ঘ স্মরণানুষ্ঠানটি পরিণত হয় একটি সমবেত স্মৃতি জাগানিয়া,সম্মান ও শ্রদ্ধাবনত বিরল ইতিহাসে। উপস্থিত ছিলেন বিলেতের অনেক গুণীজন ও গ্রণগ্রাহী। সবশেষে গাওয়া হয় আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত অমর গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাগানো একুশে ফেব্রুয়ারী’।
স্মৃতিচারণে বক্তারা গাফ্ফার চৌধুরীকে বাঙালির ইতিহাসের সূর্য সন্তান আখ্যায়িত করে বলেন, বাংলা ও বাঙালী যতদিন থাকবে, ততদিন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর নামও অমর হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পক্ষে সমাপনী বক্তব্য পেশ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল আজিজ।