একসঙ্গে কয়েকটি সড়কের উন্নয়নকাজ চলায় ভোগান্তিতে নগরবাসী
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
নগরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক হচ্ছে আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়ক। বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ অন্যান্য স্থানে যেতে নগরির বেশিরভাগ লোক এই সড়ক ব্যবহার করেন। সড়কটির মধ্যখানেই হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার। যেখানে সারাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত ভক্তবৃন্দ আসেন। এখন চলছে পবিত্র রমজান মাস। আর রমজানের আগের দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে নগরির গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। এতে করে তীব্র যানজটে পড়ছেন নগরির বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ১৫ রমজান থেকেই শুরু হবে ঈদের ব্যস্ততা। তখন অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হবে নগরবাসীকে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আগাম বৃষ্টির কারণে একসাথে কাজ হচ্ছে দাবি করা হলেও অন্য একটি সূত্রের দাবি, জুনের মধ্যেই বিলের অর্থ তুলতে তড়িঘড়ি করে এ উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।
সরেজমিন পরিভ্রমণ করে দেখা গেছে, রমজানের কয়েকদিন আগ থেকেই একসাথে নগরির ৫টি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চলছে স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কার ও উন্নয়নকর্ম। যার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরিতে চলাচলকারী জনসাধারণদের। একসঙ্গে ৫টি রাস্তা বন্ধ থাকায় বিকল্প পথও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার রাস্তাও পড়ছে তীব্র গাড়ির চাপে। একদিকে তীব্র যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যাচ্ছে, গরমে পুড়ছেন যাত্রীরা আর অন্যদিকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
‘উন্নয়নমূলক কাজ চলিতেছে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’-মর্মে নগরির আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়কে সিসিকের পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এই সড়কের আম্বরখানা পয়েন্টে রাস্তা খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে আর দরগাহ গেইট পয়েন্টে গ্যাসের পাইপলাইনের কাজ চলছে। এতদিন এই সড়কের একপাশ বন্ধ রেখে অন্যপাশে কাজ চললেও বর্তমানে দু’পাশ বন্ধ রেখেই কাজ চলছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন এই সড়ক ব্যবহারকারীরা। তাদেরকে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আর আগে যে গাড়িগুলো এই সড়ক দিয়ে যেতো এখন সেগুলো যাচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আম্বরখানা-টিলাগড় সড়ক দিয়ে। এতে করে বাড়তি চাপ পড়ছে ওই ২ ব্যস্ততম সড়কে। যার কারণে যানজট লেগেই আছে। এরমধ্যে রয়েছে বেশি ভাড়ার আরেক ভোগান্তি। আগে আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজার গেলে ভাড়া দিতে হতো জনপ্রতি ১৫ টাকা করে আর এখন দিতে হচ্ছে ২০ টাকা করে।
কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়কে চলা আম্বরখানা ও দরগা গেইটের এই সড়কের কাজ শেষ হতে যথাক্রমে দেড়মাস ও ছয়মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
অন্যদিকে, একই সময়ে চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়ক দিয়ে যেতে হয় জেলা স্টেডিয়াম ও সিলেট বিভাগের একমাত্র টারশিয়ারি হাসপাতাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ব্যস্ততম এই সড়কেরও একপাশে যান চলাচল বন্ধ রেখে চলছে পুরাতন কালভার্ট ভেঙে নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের কাজ। যার কারণে তীব্র যানজটে পড়ছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা। এছাড়াও নগরির নাইওরপুল সোবহানীঘাট সড়ক বন্ধ রয়েছে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য। যার কারণে সোবহানীঘাট পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকে। আর নগরির মেন্দিবাগ পয়েন্টেও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাস্তায় যানজট লেগেই আছে। এতে করে সুরমা নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। এদিকে রাস্তার এই শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের।
আম্বরখানা-চৌহাট্টা সড়ক দিয়ে চলাচল করা জনৈক ব্যক্তি জানান, ‘এই রোজার দিনেও রাস্তা বন্ধ করে কাজ করছে। এখন গাড়িতে উঠে যদি বন্দর যাই, তাহলে অর্ধেক সময়ই শেষ। আর সিএনজি ভাড়া তো বাড়ছেই। এমন অবস্থায় হাঁটাই শেষ ভরসা। যেই উন্নয়নে মানুষের কষ্ট হয়, এমন উন্নয়ন আমরা চাই না।’
এক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, ‘আগে ৫ মিনিটও লাগতো না বন্দর যেতে। আর এখন ঘুরে যেতে হয়, জ্যাম তো আছেই। একবার জ্যামে পড়লে আর গাড়ি চালাতেই মন চায় না। ভাড়া একটু বাড়ালেই সব সমস্যা।’
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘আগাম বৃষ্টির সম্ভাবনার পর ৭ জানুয়ারি ছিল জাতীয় নির্বাচন। আমরা ৮ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। পরে আমরা ট্রাফিক বিভাগের সাথে সভা করে কাজ শুরু করেছি। এজন্য নগরবাসীর সাময়িক কষ্ট হচ্ছে এটা যেমন সত্য, আবার আমাদের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেনগুলো করাও জরুরি। যার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হচ্ছে। ১৫ রমজানের মধ্যে আশা করছি আম্বরখানা সড়কের কাজ শেষ হবে। এরপর দ্রুত আমরা রাস্তাটি খুলে দিতে পারবো।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, ‘এটা উচিত হয়নি। তাদের উচিত ছিল একটা একটা রাস্তা ধরে কাজ করা। কারণ যেই রাস্তাগুলোতে কাজ শুরু করেছে, সবগুলোই হলো সিলেটের প্রধান রাস্তা। এটা নিয়ে আমি সিসিকের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন, জুন মাসের মধ্যেই টাকাটা (বিল) তুলতে হবে, পেইড করতে হবে। এটার বাধ্যবাধ্যকতা আছে। তাদের তো আগে থেকেই প্ল্যান করা উচিত ছিল। কারণ পুরো রমজান মাসে মানুষ খুব কষ্ট পাবে। খুব খারাপ একটা অবস্থা হবে।’
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. মো. জহির বিন আলমের বরাত দিয়ে জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘একসঙ্গে ৫ রাস্তার কাজে বিল বা বাজেট উত্তোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। উনাদের (জহির বিন আলম) সঙ্গে কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বসেছিলাম, তবে এরকম কোনো কথা হয়নি। সামনে বৃষ্টির দিন। এখন ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। এজন্য বৃষ্টির দিনের আগে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ক্লিয়ার করতে একসঙ্গে দ্রুত কাজ।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র উপ-কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি সড়কে একযোগে উন্নয়ন কাজ চলায় এখন আমাদেরকে রেশনিং করতে হচ্ছে, ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার কথা ছিল, কাজ করার জন্য সেই রাস্তা দিয়ে যেতে পারছে না। সেই চাপ এসে অন্য সড়কগুলোতে পড়ছে যেগুলোতে যান চলাচল বহাল আছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এসব সড়কে গাড়ির চাপ যেহেতু বেশি সংগত কারণেই যানজট বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তার চিন্তা রেখে সড়কে কাজ করতে হয়। কিন্তু সিলেটে রাস্তার পরিমাণ কম হওয়ায় সেই সুযোগ কম। যার কারণে আমাদেরকে বারবার ডাইভার্টিং করতে হচ্ছে।’ ভবিষ্যতে ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।