ছাতকে এক প্রবাসীর মামলায় ২ প্রবাসীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক সমাজসেবী ও ব্যবসায়ীর উপর হামলা, ছিনতাই ও লুটপাটের অভিযোগে অপর ২ প্রবাসীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে ছাতক থানা পুলিশ। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজারে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা, ছিনতাই ও লুটপাটের ঘটনা তদন্তক্রমে অভিযোগপত্র সংশ্লিষ্ট আদালতে পেশ করেছেন।অভিযোগপত্রে উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের ছাতারপই গ্রামের বাসিন্দা মুজাক্কির আহমেদের চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ীর উপর হামলা, ছিনতাই ও লুটপাটের দায়ে স্থানীয় খিদ্রাখাপন গ্রামের রেজা মিয়া তালুকদার, পাইগাঁও বর্তমান খিদ্রাখাপনের বাসিন্দা কবির আহমদ ও হিরক মিয়া তালুকদার, জাউয়া কোনাপাড়া নিবাসী গোলাম মুক্তাদির ও আলমগীর হোসাইন, পাইগাঁও গ্রামের মঈনুল ইসলাম এবং খিদ্রাখাপন গ্রামের কামরুজ্জামানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ছাতক থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতিকুল আলম খন্দকার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এই অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করেছেন। এরমধ্যে কবির আহমদ ও আলমগীর হোসাইন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যেও নানা অপকর্মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে অন্যের টাকা হাতিয়ে নেয়া ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন দুস্কর্মে জড়িত কবির আহমদ। আর আলমগীর হোসেন স্ত্রীকে মারপিট ও অমানবিক নির্যাতনের অপরাধে যুক্তরাজ্যের ডমেস্টিক ভায়োল্যান্স আইনে গতবছর দীর্ঘদিন লন্ডনে কারাভোগ করেছেন।
অভিযোগপত্র সুত্রে জানা গেছে, মুজাক্কির আহমদের যুক্তরাজ্য প্রবাসী চাচা অপর যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবির আহমদের নিকট বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত টাকা পরিশোধ না করায় লন্ডনে মুজাক্কির আহমেদের চাচা পাওনাদার কবিরের বিরুদ্ধে গতবছর ৫ ডিসেম্বর লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এ কারণে মুজাক্কিরের চাচার উপর কবির ক্ষুব্দ হন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুজাক্কিরের চাচা পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে আসেন। খবর পেয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্যে কবির আহমদ ও আলমগীর হোসেনও যুক্তরাজ্য থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কবির-আলমগীররা দেশে এসে যোগসাজশ করে অভিযোগপত্রে বর্ণিত অপর ৫ ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিশোধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৬ টায় জাউয়াবাজারের কাপড়গলিতে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিত হয়ে পুর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুজাক্কিরের চাচার উপর আকস্মিক হামলা চালায়। ঘটনার আকস্মিকতায় কোন কিছু বুঝার আগেই ভিকটিম আক্রমণের শিকার হন।
পরদিন ১৫ জানুয়ারি হামলার বিরুদ্ধে মোজাক্কির আহমেদ বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৬/২২)। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গোলাম মুক্তাদিরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠালেও পরে জামিন লাভ করেন। অন্য অভিযুক্তরা আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন লাভ করেন। ঘটনার পরম্পরায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতিকুল আলম খন্দকার যথাযথ তদন্ত শেষে গত ২৭ জুলাই খিদ্রাখাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়া তালুকদারের পুত্র রেজা মিয়া তালুকদার, পাইগাঁও বর্তমান খিদ্রাখাপনের বাসিন্দা হাজী জাফর আলী প্রকাশ ঠাকুর মিয়ার পুত্র কবির আহমদ, খিদ্রাখাপন গ্রামের মৃত খালিক মিয়া তালুকদারের পুত্র হিরক মিয়া তালুকদার, জাউয়া কোনাপাড়া নিবাসী মৃত চান্দু মিয়ার পুত্র গোলাম মুক্তাদির, মৃত আরশদ আলীর পুত্র আলমগীর হোসাইন, পাইগাঁও গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র মঈনুল ইসলাম ও খিদ্রাখাপন গ্রামের মৃত খালিক মিয়া তালুকদারের পুত্র কামরুজ্জামানকে ঘটনার সাথে জড়িত উল্লেখ করে অভিযোগপত্র পেশ করেন (অভিযোগপত্র নং-১২০/২২)। আদালত তা গ্রহণ করে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মুজাক্কির আহমেদ অভিযোগপত্র আদালতে পেশ হওয়ার পর আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রে বর্ণিত আসামীদের মধ্যে কবির আহমদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় বিভিন্ন ধারায় ২০০৮ সালের ২মার্চ তারিখে দায়েরি এফআইআর নং-৩, হিরক মিয়া তালুকদারের বিরুদ্ধে একই থানায় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর এফআইআর নং-১০, ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর এফআইআর নং-২৮, ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর এফআইআর নং-৭, গোলাম মুক্তাদিরের বিরুদ্ধে একই থানায় ২০১৭ সালের ২০ মে এফআইআর নং-২৪/১২২, কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একই থানায় ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর এফআইআর নং-২৮ চলমান রয়েছে। এছাড়া মুজাক্কির আহমদের দায়েরি মামলায় জামিন লাভ করে কবির আহমেদ ও আলমগীর হোসেন যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে আদালতের ধার্য্য তারিখে হাজিরা না দেয়ায় তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, অভিযুক্ত প্রত্যেকেই অসৎ ও দূর্ধর্ষ চক্রের সদস্য এবং তারা প্রত্যেকেই নানা অপকর্মে জড়িত। এছাড়া রেজা মিয়া তালুকদারের নামে নানা অপরাধে ইতিপূর্বেও অনেক অভিযোগ উঠেছে। সচেতন এলাকাবাসী মনে করেন জাউয়াবাজার এলাকায় যত অপরাধ সংঘটিত হয়, এরমধ্যে বেশীরভাগ ঘটনার পিছনে গডফাদার হিসেবে রেজা মিয়া তালুকদারের হাত রয়েছে।