জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন হাই কমিশনের অনুষ্ঠান: বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড কারবালার নিষ্টুরতাকেও হার মানিয়েছে
মতিয়ার চৌধুরী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী
লন্ডনঃ বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ড কারবালার নিষ্টুরতাকেও হার মানিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্যতম হত্যাকান্ড আর কোথাও ঘটেনি।
১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন প্রবীন ব্রিটিশ রাজনীতিক, লর্ড সভার সদস্য লর্ড শাইখ আহমদ। ১৫ আগষ্ট লন্ডন সময় সন্ধ্যায় লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লর্ড আহমদ এমন্তব্য করেন।
তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন উচ্চ মানের মানুষ আর একারণেই বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন ‘’আমি হিমালয় দেখিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি”।
বাঙালী জাতীর জনকের নির্মম হত্যাকান্ডের ৪৭তম বার্ষিকীতে বাকিংহ্যাম প্যালেসের অদূরে ক্যপথ্রনে তারা হোটেলের ব্যাংকুইটিং হলে আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের এই আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্যে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন লর্ড শাইখ আহমদ, লেবার দলীয় শ্যাডো মিনিষ্টার ক্যাথেরিন ওয়েষ্ট এমপি। ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন স্যার কিয়ার স্টারমার এমপি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পাঠানো বার্তা পাঠ করেন বাংলাদেশ মিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারী জাকারিয়া হক।
পাঠানো বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সুসম্পর্ক ছিল, তার মাধ্যমে উভয় দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়। উভয় দেশের সম্পর্ক আরো গভীর করতে আমরা কাজ করছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. গহর রিজভী বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারণেই সাড়ে তিন বছরেই আমরা ১২৬টিদেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। প্রতিটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ সহ বিশ্বের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ, এমনকি জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জন করি। এটা সম্ভবহয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণে।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড শুধু একটি হত্যাকান্ডই নয়, একটি স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক জাতিকে পরাধীন ও সাম্প্রদায়িক করার পাশবিক চক্রান্তও বটে।’
ড. গওহর রিজভী বলেন, “১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পিছনে যেসব খুনিরা ছিলো, তারা বিদেশেও শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তখন তাঁরা যে দেশে ছিলেন, সে দেশের সরকার তা প্রতিহত করে।”
আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. গওহর রিজভী বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। কোনো কোনোটি ছিল ব্যক্তি বিশেষের ষড়যন্ত্র, কোনোটির পিছনে ছিল সম্মিলিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু একটি প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াই ছিলো খুনিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এসবের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। যথাযথ সময়ে সেসব প্রকাশ করা হবে।”
লন্ডন বাংলাদেশ মিশনের ফাষ্ট সেক্রেটারী মাফফুজা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন, ইঞ্জিল, গীতা ও ত্রিপিটক থেকে ইংরেজী অনুবাদসহ পাঠ করা হয়। অনুষ্টানে বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত একটি প্রমান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর দেওয়ান মাহমুদ ও টিভি প্রেজেন্টার উর্মি মাজহার।