‘জামাইবাবু’র জন্য কাঁদছে শুভ্রার পরিবার, শোকে ভাসছে নড়াইল

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

নড়াইল: নড়াইলের জামাইবাবু হিসেবে খ্যাত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণবমুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে কাঁদছেন তার ছোট শ্যালক কানাই লাল ঘোষ ও তার পরিবার। শোকাহত প্রয়াত শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সব নিকট স্বজন। নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামসহ জেলাজুড়ে বইছে শোকের ছায়া। তাঁর শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়রা বলছেন, নড়াইলের তথা বাংলাদেশের মানুষের অতি আপনজন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।

ভারতের এই সাবেক রাষ্ট্রপতি ও অর্থমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও।ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৫ মার্চ স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভদ্রবিলার শ্বশুরবাড়িতে সেদিন হিন্দু রীতি নীতি মেনে জামাইবাবুকে বরণ করে নেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ‘বলি ও ননদি আর দুমুঠো চাল ফেলে দে হাঁড়িতে, ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে’… এ গান গেয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সেদিনের বরণ আজ শুধুই স্মৃতি।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের ছোট ভাই ভদ্রবিলা গ্রামের বাসিন্দা কানাই লাল ঘোষ চোখের পানি মুছে বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় মুন্নিকে নিয়ে শুভ্রা দিদি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন দিদি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। আমাদের হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে সেদিন জামাই বাবুকে বরণ করে নিয়েছিলাম। সেদিন জামাই বাবুর সঙ্গে সরকারি প্রটোকল থাকলেও তিনি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করেন। সেদিন আমাদের পরিবারের সদস্যরা শঙ্খ বাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে আর উলুধ্বনি দিয়ে জামাইবাবুকে বরণ করে নিয়েছিলেন। সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা হয়েছিল জামাইবাবুকে। আমাদের আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেদিনের জামাইবরণ আজ শুধুই স্মৃতি। তাঁর মৃত্যুতে সত্যিকার অর্থে একজন অভিভাবককে হারালাম।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের মামাতো ভাই নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মামাশ্বশুর বাড়িই হচ্ছে আমাদের এই তুলারামপুর গ্রাম। আমাদের সবসময় খোঁজখবর নিতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভারতে তাঁর বাসায় বেড়াতে গেলে নড়াইল তথা বাংলাদেশের মানুষের কথা আগ্রহ সহকারে শুনতেন। আমাদের ভালো-মন্দ শোনার আর কেউ থাকলো না। আজ থেকে আমরা এতিম হয়ে গেলাম।

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমরা একজন ভালো বন্ধুকে হারালাম। আমি তাঁর (প্রণব মুখোপাধ্যায়) বাসায় অনেকবার গিয়েছি। তাঁর আতিথেয়তা কখনো ভোলার নয়। তাঁর মৃত্যুতে নড়াইলবাসী শোকাহত।

নড়াইল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভদ্রবিলা গ্রাম। এ গ্রামেই ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী সাবেক ফার্স্টলেডি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। শুভ্রার বাবার নাম অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষ। জন্মের পরে তার নাম রাখা হয় গীতা ঘোষ। গীতার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে নড়াইলের ভদ্রবিলা এবং মামাবাড়ি তুলারামপুর গ্রামে। নড়াইলের এই দুটি গ্রামে (ভদ্রবিলা ও তুলারামপুর) তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এ দুটি গ্রামে রয়েছেন তার অনেক আত্মীয়-স্বজনও। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে গীতা ঘোষ পরিচিতি পান শুভ্রা মুখোপাধ্যায় হিসেবে। শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে (আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয়-স্বজন সূত্রে জানা গেছে, শুভ্রা অর্থাৎ গীতার শৈশবের প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে নিজবাড়িতে (পিত্রালয়) কাটলেও পরে তুলারামপুরে মামাবাড়িতে বসবাস করে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর চলে যান কলকাতায়। ৯ ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। অন্যরা ভারতে চলে গেলেও পৈত্রিক বাড়ি নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করছেন শুভ্রার ছোট ভাই কানাই লাল ঘোষ। ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটায় সপরিবারে বসবাস করেন তিনি। আর শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের মামাতো ভাইয়েরা বাস করেন তুলারামপুর গ্রামে।এদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি ভাস্বর করে রাখতে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পাঁচতলা বিশিষ্ট ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ছাত্রী হোস্টেল, তুলারামপুরে দুটি মন্দির এবং তুলারামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন নির্মিত হয়েছে।

You might also like