জামালগঞ্জে ১০ বছর থেকে পড়ে রয়েছে নদী শাসনের তৈরি ব্লক
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় বসতভিটায় ব্লক থাকায় গৃহনির্মাণ করতে পারছেন না অনেকে। তেমনি নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকরী সুফল হচ্ছে না।
জামালগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, জামালগঞ্জ উপজেলার তেলিয়া গ্রাম। সুরমা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার জন্য স্থানীয়ভাবে অনেক আবেদনের পর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্য তেলিয়া নদী শাসনে ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে ১৭ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে। ২৭ হাজার ডাম্পিং ও ৩৮ হাজার প্রেন্টিং ব্লক তৈরি করে ভাঙ্গন এলাকায় ফেলা হয়। নদীর তীরবর্তী মাটি কেটে লেভেল করে জিও টেক্স-এর উপর বিছানো হয় এই প্রেন্টিং ব্লক।
পরবর্তীতে ভাঙ্গনরোধে দ্বিতীয় ধাপে বিচ্ছিন্নভাবে নদীভাঙ্গনের স্থান মেরামত করার জন্য হাজার হাজার ব্লক নির্মাণ করে রাখা হয় সুরমা নদীর পূর্বতীরে মফিজনগর গ্রামের পাশে। পরে এই ব্লকগুলো মফিজ নগরসহ বসতবাড়ি, ব্যক্তি মালিকানা জায়গায়, খাদ্য গোদামের যাতায়াতের স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। যে কারণে ব্যক্তি মালিকানা লোকদের বসতভিটা নিজে ব্যবহার করতে পারছেন না। সেই সাথে নদীভাঙ্গন এলাকা রোধে পাউবো কোন পদক্ষেপ নেই।
তেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা (অব.) শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, বসন্ত কালে যখন নদীর পানি কমে যায় তখন নদীভাঙ্গনের করুণ দৃশ্য সুস্পষ্ট হয়। তখনই সংরক্ষিত ব্লকগুলো বিছানোর কথা ছিল কিন্তু ১০ বছর যাবৎ কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একটু তদারকি করলেই সরকারের অর্থের অপচয় রোধ হতো এবং উপকারভোগীরা উপকার পেতো।
জামালগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক মরহুম গোলাম মর্তুজার বাসার আঙ্গিনাসহ মুক্তার হোসেন তালুকদারের বসতভিটায় ব্লক থাকার কারণে গৃহনির্মাণ করতে পারছেন না। তেমনি নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকরী সুফল পাচ্ছেন না। শামছুজ্জামান তালুকদার ও রুবেল মিয়াসহ অনেকের দাবি চলতি মৌসুমেই সংরক্ষিত ব্লকগুলো তোলে ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বসতভিটা ও খাদ্য গুদাম প্রাঙ্গন থেকে ব্লক সরিয়ে ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় মসজিদসহ দেড় শ’ ঘর বিলীন হওয়ার পর পাউবো এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও উপকারভোগীদের কাজে আসছে না।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, আমার দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্লক সরানোর জন্য কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কর্ণপাত করছেন না পাউবো কর্তারা। এই ব্লকের কারণে খাদ্য গুদামের মালামাল উঠা-নামায় শ্রমিকদের অনেক কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পাউবো’র পক্ষে জামালগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালে যখন ব্লকগুলো তৈরি হয়, তখন পরবর্তী এক বছরের মধ্যেই নদীভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টে ব্লক ফেলে মেরামত করার কথা ছিল। যেহেতু ১২ বছর চলে গেছে, এখন বিষয়টি প্রকল্পের অধীনে নেই। ইউএনও ইচ্ছে করলে জনস্বার্থে যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারেন।