দুস্থদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুবসমাজকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, আত্মোন্নয়ন ও সমাজ বিনির্মাণে গতিশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি মহিলা, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ, প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিও যুবসমাজকে দায়িত্বশীল হয়ে সমাজ-রাষ্ট্র থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে আরো বলেন, সরকার যুবসমাজকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, প্রাণশক্তিতে ভরপুর আমাদের যুবসমাজ তাদের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও কার্যকর অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস ২০২০’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে তিনি দেশের তারুণ্যদীপ্ত যুবসমাজকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। এবারের প্রতিপাদ্য মুজিববর্ষের আহ্বান ‘যুব কর্মসংস্থান’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেন্টার অভ্ এক্সিলেন্স হিসেবে সাভার, ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় যুবউন্নয়ন ইনস্টিটউট গড়ে তোলা হয়েছে, যার মাধ্যমে যুবপ্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দেশ পুনর্গঠনের কাজে তাদেরকে নিয়োজিত করেছিলেন।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মূলধারায় যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রকল্প ও যুবকর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুব সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক এবং কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যুবঋণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রবাসেও যুবদের কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৭ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবনারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ৬৪টি জেলা কার্যালয় ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৪৯৮টি উপজেলায় ৮৩টি ট্রেডে এ পর্যন্ত ৬১ লাখ ৭৬ হাজার ৭০৮ জন যুবকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্যে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৫ জন যুব আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ‘যুবকল্যাণ তহবিল আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি। যার আওতায় এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২৩৫টি যুব সংগঠনকে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ‘জাতীয় যুবনীতি, ২০১৭’ প্রণয়নপূর্বক অ্যাকশন প্ল্যান প্রকাশিত হয়েছে ও ইয়ুথ ইনডেক্স প্রণীত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনগুলোকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে যুবসংগঠন (নিবন্ধন এবং পরিচালনা) আইন, ২০১৫ ও যুব সংগঠন (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিধিমালা, ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, এছাড়াও এ পর্যন্ত ২০ হাজারের অধিক যুবসংগঠন তালিকাভুক্ত ও নিবন্ধিত হয়েছে। দেশের বহু যুবক ও যুবসংগঠক ‘কোভিড-১৯’ পরিস্থিতিকালীন স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস ২০২০’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।