দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ৮২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

পিরোজপুর: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরকে নিয়ে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলায় ফসলের নিবীড়তা ৫-৮ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রনালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে।জানা গেছে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে উপকূলীয় এলাকার লবনাক্ততার কারণে আবাদী জমিতে ফসলের উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ ৫ জেলার পরিবেশগত বৈশিষ্টের কারণে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি, জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়ে বার-বার আক্রান্ত হয়। এছাড়া এই অঞ্চল সমূহে শুষ্ক মৌসুমে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ও লবনাক্ততা বৃদ্ধি পায়। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এসব জেলায় কৃষির আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমূহ ও যান্ত্রিকীকরণের সুযোগ সীমিত, ফলে কৃষির কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষক ধানভিত্তিক শস্য উৎপাদনের প্রতি বেশী মনোযোগী হওয়ায়, ভূমিক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে। পানি সম্পদের ঘাটতি তৈরী হচ্ছে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ও উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং এর ফলে পুষ্টি ও খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে এ অঞ্চলের চাষাবাদযোগ্য জমি চাষের আওতায় আনা, পানি সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে বসত বাড়িতে সবজি এবং উদ্যানতাত্বিক ফসল চাষ সম্প্রসারণ এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে এই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়।
এ প্রকল্পর পরিচালক আলমগীর বিশ^াস জানান ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ৩টি বিভাগ ফরিদপুর- খুলনা- বরিশাল এর ৫ জেলার ৩৯টি উপজেলার ২৭ হাজার ৮৮৫টি কৃষক পরিবার প্রদর্শনীর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে এবং ২৯ হাজার ৫২০ জন কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হবে। এছাড়া মাঠ দিবস, কৃষি মেলা, উদ্বুদ্ধকরণ, ভ্রমণ ও আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ কৃষক পরিবার উপকারের আওতায় আসবে।
এ প্রকল্পর ডিপিডি তৌহিদুদ্দিন জানিয়েছেন ৩৮ হাজার কৃষককে সার, সুপারিশ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। ধান, গম, ভুট্টা, বার্লি এর ১০ হাজার ৫৩০টি, পাটের ১১৭০টি, মুগ মসুর সয়াবিনের ২৯২৫টি, সরিষা তিল সূর্যমূখী চিনাাবাদামে ৩১২০টি, মরিচ হলুদ পিয়াজ রসুন আদার ৪৪৮৫টি, সবজির ৫৮৫টি, ডার্মি কম্পোষ্ট এর ৩৯০টি, কম্পোষ্ট এর ৩৯০টি, খামারজাত জৈব সারের ৩৯০টি, ঘেরের আইলে সবজি চাষের ৩৯০টি, জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার ১৭৫৫টি, ব্লক প্রদর্শনী ধানের ৫৮৫টি, একক ফল বাগানের আম লিচু পেয়ারা মাল্টা, সবেদা, ড্রাগণ ফল, আমড়ার ৭৮০টি এবং আম লিচু পেয়ারা লেবু মালটা আমড়ার মিশ্র ফল বাগানের ৩৯০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে।
এদিকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পিরোজপুর জেলায় ৬২১টি রবি মৌসুমের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালক ড. মো. নজরুল ইসলাম সিকদার জানান। তিনি জানান খরিপ-১ মৌসুমে এ জেলায় ১৪৬টি প্রদর্শনী প্লট তৈরী করা হয়েছিল। এছাড়া খরিপ-২ মৌসুমে ১৩৯টি প্রদর্শনী প্লটও করা হয়েছিল। গত অর্থ বছরে ১১০২ টি ক্ষুদ্রাকার কৃষি যন্ত্রপাতি, ১০০ ফুট ফিতা পাইপসহ ৩১২টি লো-লিফট পাম্প, ১৯৫টি হ্যান্ডরিপার, ৪০০টি হ্যান্ড স্পেয়ার, ১৯৫টি ফুট পাম্প কৃষকদের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ জেলা কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে এ ৫ জেলায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন, ফেরমন ফাঁদ, জৈব বালাই নাশক ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। খরিপ-১ এ আউশ জাতের প্রদর্শনী, আউশ ব্লক প্রদর্শনী, পাট প্রদর্শনী, জৈব-কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী এবং সবজি প্রদর্শনী প্লটও করা হয়েছে। এদিকে চলতি রবি মৌসুমে নিবীড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় এ ৫ জেলাকে নিয়ে চলমান কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে পিরোজপুর জেলার ৭ উপজেলায় ৫০৮ টি প্রদর্শনী প্লট তৈরীর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বোরো, ভুট্টা, মুগ, মসুর, চিনাবাদাম, সরিষা, সূর্যমূখী, পিয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও ভার্মিকম্পোস্ট এর এসব প্রদর্শনী প্লটের মধ্যে সদর উপজেলায় থাকছে ৭৮টি। এছাড়া ইন্দুরকানীতে ৫৮টি, কাউখালীতে ৬৭টি, নেছারাবাদে ৬৬টি, নাজিরপুরে ৯০টি, ভান্ডারিয়ায় ৭১টি এবং মঠবাড়িয়ায় ৭৮টি প্লট হচ্ছে। এসব প্রদর্শনী প্লট তৈরীতে বীজ, সার বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। প্রতিটি ৩৩ শতকের প্রদর্শনী প্লটে উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের পরামর্শ প্রদান করছেন।

You might also like