নারীর হিজাব, পুরুষের টাকনুর ওপর পোশাক পরার বিজ্ঞপ্তি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে!
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ সরকারি বিধি অনুযায়ী নয়,জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা.মুহাম্মদ আব্দুর রহিম তার অফিস চালাতে চান নিজের স্টাইলে।এজন্য তিনি তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ড্রেস কোড নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।গতকাল (২৮ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি লিখেছেন,অত্র ইনস্টিটিউটের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,অফিস চলাকালীন সময়ে মোবাইল সাইলেন্ট/বন্ধ রাখা এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পুরুষ টাকনুর ওপরে এবং মহিলা হিজাবসহ টাকনুর নিচে কাপড় পরিধান করা আবশ্যক এবং পর্দা মানিয়া চলার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সরকারি চাকরিবিধিতে এমন নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার তার রয়েছে কিনা অথবা সরকারি কোনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে কি—এমন প্রশ্ন করলে ডা. মুহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন,ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।টাকনুর ওপরে যদি পুরুষ কাপড় পড়ে তাহলে তার কোনও গুনাহ নাই,টাকনুর নিচে পরলে সে কবিরা গুনাহ করলো।একইভাবে নারীদের জন্যও সেটা প্রযোজ্য,নারীরা পর্দার ভেতরেই সুন্দর।টাকনুর নিচে কাপড় পরলে তার কবিরা গুনাহ হবে না।এই জিনিসটা আমাদের দেশে উঠে গেছে।
তিনি নিজেই পালটা প্রশ্ন করেন,আমরা আজকে কি বিপর্যয়ে নাই?’ তিনি বলেন,এ দেশের কয়জন ইমাম-মুয়াজ্জিন,কয়জন হিন্দু ধর্মের ব্রাহ্মণ মারা গেছেন কোভিডে? আপনাদের সাংবাদিকদের অনেকেই গেছেন,পুলিশ গেছেন,ডাক্তার গেছেন- হেন পেশা নাই যে পেশাকে করোনা আক্রমণ করেনি,কিন্তু কয়জন ইমাম-মুয়াজ্জিন মারা গেছেন?তার মানে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তারা সবাই পাপী ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমি এ কথা বলছি না।ধর্মীয় অনুশাসনের জীবনযাপন জরুরি।অন্যরা কোন কারণে মারা গেছেন সেটা আমি জানি না।প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে এ বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন কিনা অথবা এটা কোনও সরকারি নির্দেশ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি আমার অফিসের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।আমাদের দেশ মুসলিম কান্ট্রি,আমাদের দেশে, আমার অফিসে যদি এভাবে সজ্জিত হয় আমার কাছে ভালো লাগবে।
সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে পরিচালক হিসেবে সেটা তিনি দিতে পারেন না বলেও স্বীকার করেন।তিনি বলেন,আমি আমার কলিগদের এ চিঠি দিছি নিয়ম-কানুন পালন করার জন্য।তিনি আরও উল্লেখ করেন,আমি আমার স্টাফদের সুশৃঙ্খলভাবে চালানোর জন্য এবং রহমতের সঙ্গে চালানোর জন্য এটা দিয়েছি।ড্রেস কোড নিয়ে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আমাকে সরকার থেকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে তিনি প্রতিবেদককে অফিসে যেতেও বলেন তিনি।তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে পরিচালনা ঠিকমতো করতে পারছি না,এটা আমার দায়িত্বে অবহেলার নজির বলে মনে করছি।আমি একজন বিসিএস কর্মকর্তা।আমি আমার অফিস চালাবো আমার স্টাইলে।কিন্তু আপনার স্টাইলে সরকারি অফিস চালাতে পারেন কিনা, সরকার সে দায়িত্ব দিয়েছে কি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আপনি তাহলে মামলা করেন,অসুবিধা কী? অথবা আমার অফিসে আসেন,কথা বলি আপনার সঙ্গে।
তিনি বলেন,এ নির্দেশের সঙ্গে আমি আরও বলেছি,অফিস চলাকালীন মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখবেন অথবা অফ করে রাখবেন।সরকারের কর্মঘণ্টাগুলো মোবাইল বা ফেসবুকে চালাইয়া নষ্ট করতেছেন।নৈতিকতা আমাকে শেখাবেন না।পরিচালক হিসেবে আপনি করতে পারেন না মন্তব্য করলে তিনি বলেন,সেজন্য আপনি জবাব নেওয়ার কেউ না,সে জন্য আমার প্রশাসন রয়েছে,তারা দেখবে।প্রতিবেদককে এ পর্যায়ে বলেন,আপনার সঙ্গে এই অফিস আওয়ারে কথা বলেছি এই কারণে যে ফোন না ধরলে আপনি পেপারে দিয়ে দেবেন তাকে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।তবে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালকের এ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।