পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে জার্মানিতে বিক্ষোভ করেছে বেলুচিস্তানের নাগরিকরা
মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী
লন্ডনঃ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেলুচ জনগণের উপর নতুন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা অন্য যেকোন সমরে তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলুচিস্তানের জনজীবন কঠোরভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বালুচ রিপাবলিকান পার্টি জার্মানি ডর্টমুন্ডায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।ব্যানার ফেষ্টুন হাতে নিয়ে জার্মানীতে বসবাসরত শত শত বালুচ নাগরিক অংশ নেয়।সমাবেশে বক্তারা বলেন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেলুচ জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বেলুচিস্তানের জনজীবন কঠোরভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বালুচ বাসিন্দাদের দমিয়ে রাখতে রাখতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে নিজস্ব আইন প্রণয়ন করেছে। বেলুচিস্তানের প্রতিটি জেলায় কার্যত একই অবস্থা। নিরাপত্তা বাহিনী বেলুচ জনগণকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এবং তাদের উপর নির্যাতন করছে। বালুচ নারীদের ধর্ষন করছে পাকিস্তান আর্মি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নারী, শিশু বৃদ্ধরাও।১২ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের প্রত্যেক জেলা সদরে স্থানীয় সামরিক ক্যাম্পে সপ্তাহে একবার বা দুবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নতুন নিয়ম চালু করেছে, ।
বেলুচিস্তানের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থানীয়দের এমনকি সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া জানাজা করার অনুমতি নেই।এমনকি কাছের কোনো শহরে গিয়ে গৃহস্থালির জিনিসপত্র কেনার জন্য সেনাবাহিনীর ছাড়পত্র নিতে হয়। টুইটারে এনিয়ে ভয়েস ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস টুইট করেছে, “বেলুচ রিপাবলিকান পার্টি জার্মানি ডর্টমুন্ডে বেলুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন যেখানে পাক সেনাবাহিনী প্রতিটি সীমা অতিক্রম করছে৷ নৃশংসতা বেলুচিস্তানের মানুষ প্রতিটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং নিরাপত্তা সংস্থার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে।” বেলুচিস্তানে নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা সম্প্রতি বেড়েছে কয়েকগুন।পাকিস্তানের স্থানীয় একটি পাপ্তাহিক খবর দিয়েছে , বালুচ নেতা ফিরোজ বালোচাকে ১১ মে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী অপহরণ করে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বেলুচিস্তান প্রদেশের হাজার খানেক প্রতিবাদকারী ‘নিখোঁজ’ রয়েছে। বেলুচ ‘জাতীয়তাবাদী’রা নাগরিক অধিকারের বিধিনিষেধ এবং চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য বেশ কয়েকটি সংগঠন তৈরী করেছে। এসব সংগঠন দাবি করেছে বালুচরা তাদের নিজ দেশে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এমনকি চাকুরী থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, সম্প্রতি ৩ হাজার বালুচ নাগরিক গুম হয়েছে পাক বাহিনীর হাতে। তদন্ত কমিশন ৭,000টি জোরপূর্বক গুমের ঘটনা খুঁজে পেয়েছে, যার মধ্যে মোটামুটি ৫,000টি ২০২১ সালের মধ্যে পরিচালনা করা হয়েছে। পাকিস্তানে জোরপূর্বক গুমের অনুশীলন শুরু হয়েছিল মোশাররফ প্রশাসনের সময় (১৯৯৯-২০০৮), কিন্তু এটি পরবর্তী সরকারের অধীনে অব্যাহত রয়েছে।
বালুচরা প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু তাদের প্রতিবাদে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।বেলুচ ছাত্ররা বেলুচিস্তানে বা পাকিস্তানের অন্য কোথাও, অপহরণ, নির্যাতন এবং খুন হওয়ার ভয়ে আতংকিত। তাদের অবাধে ঘোরাঘুরি করতে বা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো সাধারণ ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়ার অনুমতি নেই।থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা হয়রানি, হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতন বেলুচ জনগণকে এমন পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। পাকিস্তানে বেলুচ জনগণ বেদনা ও যন্ত্রণার মাঝে জীবন অতিবাহিত করছে।