ফেইসবুকের মাধ্যমে বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলঃ গ্রুপিং দ্বন্ধ
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিনিয়র আ’লীগ নেতাদের গ্রুপিং দ্বন্দ্বের বলির শিকার হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। উত্তপ্ত হচ্ছে দলীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
অনুসন্ধান করে বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, আর্শীবাদপুষ্ট না হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের বিদ্যমান কমিটির বিরুদ্ধে রকমারী ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন উপজেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দের একটি পক্ষ। এখানেই শেষ নয়, পছন্দ না হওয়ায় স্থানীয় আ’লীগ নেতারা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে কমিটি বাতিলের লক্ষ্যে তদবির শুরু করেছেন। সফলও হয়েছেন তারা। একপর্যায়ে ‘রাতের আঁধারে’ ফেসবুকে একটি স্টাটাস দিয়ে বড়লেখা উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদকে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি এখনও পর্যন্ত লিখিতভাবে জানানো হয়নি। তাদের না জানিয়ে বিনা নোটিশে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমীরুল হোসেন চৌধুরী (আমীন) এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম তাদের মনগড়া একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে পোষ্ট করে দেন। প্রথম পেস্ট দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষর এবং তারিখ ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কিছুক্ষণ পর বিজ্ঞপ্তিটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে এডিট করে পূণরায় পেস্ট করা হয়। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন অগঠণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে উপজেলা ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েছেন। যা নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে পৌর শহরের উত্তর বাজারের ডাকবাংলো এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পুরো শহর ঘুরে ডাকবাংলোর সামনে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে বড়লেখায় ছাত্রলীগ খুবই সুসংগঠিত। এখানে সব সময় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয়। তবে হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ‘কালো টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে’ ফেইস বুকে স্টাটাস (!) দিয়ে জেলা ছাত্রলীগ বড়লেখা উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে। যা কোনভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
বক্তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি যারা নিজেরাই মেয়াদোত্তীর্ণ! তারা কিভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত একটি উপজেলা কমিটি অযৌক্তিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন? মূলতঃ কুচক্রী একটি মহলের ইন্ধনে জেলা ছাত্রলীগ সুসংগঠিত বড়লেখা ছাত্রলীগকে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি বড়লেখা ছাত্রলীগকে আরও সুসংগঠিত করতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।’
এ সময় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বড়লেখা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ময়নুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুমন আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (সাবেক) বাকের আহমদ ও পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি আলী আহমদ প্রমুখ।
দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বড়লেখা উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ বরাবরে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্তও আহ্বান করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বলেন, ‘বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়টি জানিনা। আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছ থেকে জানলাম। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। সংগঠন চালাতে অনেক সময় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখানে ৩টি ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত আছেন। তাই আমরা সব চিন্তা করে ৩টি ইউনিটকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়ার চিন্তা করে এই উদ্যোগ নেই। এরপর সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করেছি।’