বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ‘ম্যাগনা কার্টা’
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার মিশনের ‘বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জে’ “Contemporary Thoughts on Bangabandhu Sheikh Mujib’s Historic 7 March Speech: A UNESCO Documentary Heritage” শীর্ষক এক বিশেষ স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বাঙালির অধিকার ও স্বাধীনতার ‘ম্যাগনা কার্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের অলিখিত ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ম্যাগনা কার্টা।”
বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি স্কটিশ, আইরিশ এবং ওয়েলশ ভাষায় অনুবাদ করেছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার ব্রিটিশ একাডেমিয়া এবং মিডিয়াকে এই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ-এর রাজনৈতিক তাৎপর্য নিয়ে আরও গবেষণার আহ্বান জানান।বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর প্রফেসর কৌশিক বসু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত অনুপ্রেরণা। তিনি আরো বলেন, “আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে যা খুব কম লোকই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম দেশ।”
ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এ উপলক্ষে এক বিশেষ ভিডিও বার্তায় বলেন এই ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলের ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করার জন্য তিনি গর্বিত। তিনি আরো বলেন, “ইউনেস্কোর ইতিহাসে লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়া একটি প্রামাণ্য দলিল স্বীকৃতির ঘটনা এটিই প্রথম।বিবিসি-এর প্রখ্যাত ব্রডকাস্টার হামফ্রে হকসলি বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্সে শেখ মুজিবের ১৮ মিনিটের শক্তিশালী ভাষণ তাঁর জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নিরাপোশ বাণী।”
ঢাকায় তাঁর সফরের কথা স্মরণ করে হামফ্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের প্রশংসা করে বলেন, “ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং উন্নয়নের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দক্ষিণ এশিয়ার ইকোনমিক টাইগার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের এই আসামান্য সাফল্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নে আগ্রহী সকলের গবেষণা করা উচিত।লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আলনূর ভিমানি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী টকস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “অমর্ত্য সেন বঙ্গবন্ধুকে “বিশ্ববন্ধু” (বিশ্ববন্ধু) বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন কারণ তাঁর আদর্শ শুধু বাংলার জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির মূল্যবোধ আজকের বিশ্বের জন্যও অতন্ত্য প্রাসঙ্গিক।”
স্বারক আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন লন্ডন-ভিত্তিক ‘এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ পত্রিকার সম্পাদক ও বিবিসি-র সাবেক সাংবাদিক ডানকান বার্টলেট, প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাংবাদিক এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব অ্যাডভান্সড স্টাডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সৈয়দ বদরুল আহসান, ইউকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান এমবিই এবং মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম (সোয়াস)-এর প্রভাষক, ড. সোমনাথ বাতাবিয়াল। ৭ মার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও স্মারক অনুষ্ঠানের সহ-অংশীদার নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তব্য দেন।অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ওপর একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। হাইকমিশনার আগত অতিথিদের নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্লাব ইউকে কর্তৃক হাইকমিশনকে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের একটি চিত্রকর্মের মোড়ক উন্মোচন করেন ।অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।