বন্যায় সড়ক ভেঙ্গে ছাতক উপজেলায় ২২০ কোটি টাকার ক্ষতি
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ছিল গত এক সপ্তাহ। এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি রয়ে গেছে। বন্যায় এ অঞ্চলের শত-শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যে কারণে বানভাসি মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ও সেতু-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব রাস্তায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় তাদের ক্ষত-বিক্ষত চিত্র এখন ফুটে উঠছে। গ্রামীণ অনেক সড়ক ভেঙ্গে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। পানির প্রবল স্রোতে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া দোয়ালিয়া সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙ্গে গেছে। বন্যার্ত পরিবারের জন্য ছাতক পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ছাতক থেকে সংবাদদাতা জানান, এবারের বন্যার প্রবল স্রোতে ছাতকের সুরমা সেতুর কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই কারণে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উপজেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ লাল পতাকা টানিয়ে রাখে। একই সাথে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জরুরী মেরামত কাজ চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় মতে, বন্যায় উপজেলার কৈতক-সিরাজগঞ্জ সড়ক, কালিপুর-হায়দরপুর-সাতগাঁও সড়ক, মঈনপুর থেকে সিরাজগঞ্জ, জালালপুর থেকে রসুলগঞ্জ, দোলারবাজার রাস্তা, জাউয়া-লক্ষমসোম থেকে ভাতগাঁও-ভমভমী বাজার সড়ক, ধারণ থেকে আমেরতল বাজার সড়ক, নোয়ারাই ইউনিয়নের মৌলা চৌমহনী বাজার সড়ক, ছাতক উপজেলা সদর থেকে আমেরতল-জাউয়া সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নের তাজপুর সড়ক, কালারুকা থেকে রামপুর সড়ক। ফকিরটিলা থেকে হাদা, নোয়ারাই থেকে নরসিংপুর, জোড়াপানি থেকে চৌমহনী বাজার সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ থেকে লাকেশ্বর, বড়কাপন থেকে পান্ডারগাঁও, জাউয়া থেকে ঝামকসহ উপজেলার আরো কয়েকটি সড়ক অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, জাউয়াবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক, কালারুকা ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ আলম, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ, নোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা জানিয়েছেন, বন্যায় রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, সবজি বাগান, কৃষি ও মৎস্য খামারীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমান জানান, উপজেলার মধ্যে অনেক কাঁচাসড়ক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনুমান ২০ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে অবহিত করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী সাব্বীর আহমেদ জানান, বন্যায় বিভিন্ন এলাকার সড়ক ভেঙ্গে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ জানান, বন্যায় এখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ইতোমধ্যে সরকার বন্যার্ত লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দিয়েছে। বন্যায় এখানের রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।