বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক-সিলেট রেলপথ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-ছাতক রেলপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বানের পানির তীব্র স্রোতে রেললাইনের অধিকাংশ স্থানে সরে গেছে স্লিপারের নীচের মাটি ও পাথর। এতে স্থানে স্থানে রেললাইনের নিচে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে এই রেলপথটি স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে জনমনে শংকা দেখা দিয়েছে।ছাতক থেকে সংবাদদাতা সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানান, ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন হতে পশ্চিম-উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ওই সময়ে এই রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এরআগে এটি ছিলো আখাউড়া-কুলাউড়া-সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালু, চুনাপাথর ও কমলালেবুসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়ার জন্যই মূলতঃ রেলপথটি নির্মিত হয়েছিলো। এসব পরিবহনের সাথে ব্যাপক সুবিধার সৃষ্টি হয় ছাতক অঞ্চলসহ সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের যাতায়াতে। সে সময় ট্রেনই ছিলো একমাত্র ভরসা। শুরু থেকেই রেল বিভাগের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছাতক-সিলেট রেলপথটি।
১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান দখলে করে নেয়। প্রতিদিনই এ পথে ৩টি ট্রেন যাতায়াত করতো। মাঝে নানা অজুহাত দেখিয়ে কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেন ও ট্রেনের বগি সংখ্যা। ট্রেনে করে প্রায় ৪৫ মিনিটে ছাতক থেকে সিলেট পৌছানো যায়। সিলেট-ছাতক রেলপথের ট্রেন পথিমধ্যে খাজাঞ্চীগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। ছাতক অঞ্চল, সিলেটের সৎপুর ও খাজাঞ্চীগাঁও এলাকার কয়েক হাজার মানুষের সিলেট শহর ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একসময় যোগাযোগের এই রেলপথই ছিল একমাত্র মাধ্যম।শিল্প শহর ছাতক থেকে চুনা পাথর, সিমেন্ট, স্লিপার, বালু, ভারী পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল দেশের অন্য স্থানে সরবরাহ করতে এ রেলপথে সড়ক পথের চেয়ে পরিবহণ খরচ কয়েক গুণ কম পড়ে।সিলেট থেকে ছাতকে রেলপথের দুরত্ব ৩৬ কিলোমিটারের ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকার বিপরীতে বাসের ভাড়া বর্তমানে ৬০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০টাকা। সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তার চাল-গম ইত্যাদি এ রেলপথে পরিবহনেও অনেক সুবিধা।
দেশের যে কোন স্থান থেকে রেলপথে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ছাতক নিয়ে এসে নৌপথে জেলার অন্য উপজেলায় পৌছানো সহজ। এতে ট্রাক ভাড়ার চেয়ে প্রায় কয়েকগুণ সরকারী অর্থ সাশ্রয় হবে বলে জানা গেছে। গুরুত্বপুর্ণ এই রেলপথটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে স্লিপার ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাবারও আশংকা রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।এদিকে, সোমবার ছাতকে বন্যাদূর্গতদের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ বিতরণকালে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি বলেছেন, ভয়াবহ বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক-সিলেট রেলপথটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক-সিলেট রেলপথ সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।