বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির তিরোধান দিবস আজ
বাউল সম্রাট লালন ফকিরের ১৩০তম তিরোধান দিবস আজ। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন তিনি।
লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো মূলত বাউল গান হলেও বাউল সম্প্রদায় ছাড়াও যুগে যুগে বহু সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে লালনের এই গানসমূহ উচ্চারিত হয়েছে। এমনকি গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।
লালন ফকিরের ১৩০তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় এবার থাকছে না কোনো আয়োজন। করোনার কারণে সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে আয়োজকরা। অনেক বাউল সাধু জড়ো হলেও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ফিরে যাচ্ছেন তারা।
করোনাকালের আগে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট লালন ফকিরের আখড়ায় প্রতিদিন থাকতো হাজার হাজার মানুষের পদচারণা। বাউল ফকির আর সাধুদের গানে মুখরিত থাকতো আশপাশের এলাকা।
কিন্তু এবার মহামারির কারণে লালন স্মরণ উৎসবের সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে আয়োজকরা। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে জনসমাগমে । তারপরও দূরদূরান্ত থেকে আসছেন অনেক লালন ভক্ত ও দর্শনার্থী। কিন্তু কোনো আয়োজন না থাকায় নিরাশ মনে ফিরে যাচ্ছেন তারা।পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে পরে বড় পরিসরে উৎসবের আয়োজন করা হবে বলে জানান লালন একাডেমীর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন।কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম হোসেন জানান, ‘এ বছর করোনার কারণে তিরোধান দিবসটি আমরা স্থগিত করেছি। লালনের এই সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়। সেক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তাই এ বছর এ সিদ্ধান্ত।’