চিত্রশিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর ক্যানভাস স্টোরি : ব্রিটিশ মূলধারায় আবহমান বাংলার প্রতিচ্ছবি
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বাংলাদেশের হাজারো বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কে ব্রিটিশ মূল ধারার আর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে সম্পৃক্ত করতে লন্ডনে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী চিত্র শিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর ছয়মাস ব্যাপী একক চিত্রকর্ম বিষয়ক প্রকল্প “ক্যানভাস স্টোরি” ।আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড এবং ন্যাশনাল লটারির সহযোগিতায় পরিচালিত এই প্রকল্পে তিনি কাজ করবেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী কালচারের হেরিটেজের তিনটি বিষয় নিয়ে।
বিষয় গুলো হলো দোল উৎসব, মনসা মঙ্গল এবং নৌকা বাইচ।বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের জন্য গোটা প্রকল্পের কাজ নির্বাপন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে । ক্যানভাস স্টোরি প্রকল্পের বিষয়বস্তু জানতে চাইলে শিল্পী বলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যময় আবহমান সংস্কৃতির সমারোহ থেকে এই প্রজেক্টে তিনটি বিষয় নেওয়া হয়েছে। প্রজেক্টের প্রথম ধাপে রয়েছে উক্ত বিষয়ের উপর গবেষণা। এর পর তিনটি বিষয়ের উপর আঁকা হবে তিনটি চিত্রকর্ম। সেই সাথে প্রত্যেকটি চিত্রকর্মের ভিডিওচিত্র ধারণ করে তৈরী হবে তিনটি শর্ট ফিল্ম যার নাম দেওয়া হয়েছে ক্যানভাসের গল্প বা ক্যানভাস স্টোরি। প্রতিটি ফিল্মে রং তুলি ক্যানভাসের চলনের সাথে সংগীত এবং কথায় তুলে ধরা হবে উক্ত বিষয়ের গল্প। সেই সাথে রয়েছে কালচারেল হেরিটেজের সাথে সম্পৃক্ত গবেষক, একাডেমিশিয়ান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছয়টি অনলাইন সেমিনার।
প্রত্যেকটি সেমিনারে আলাদা করে জাতিস্বত্তা এবং জাতি পরিচয়কে শাক্তিশালী করতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।ক্যানভাস স্টোরি’ প্রজেক্টের তিনটি শর্ট ফিল্ম প্রিমিয়ারের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ঊনত্রিশ নভেম্বর ২০২০, দশ জানুয়ারি ২০২১ এবং ৭ মার্চ ২০২১। যা প্রিমিয়ার হবে শিল্পীর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল মৌনী মুক্তা থেকে।সেই সাথে আর্কাইভ হবে ডায়াস্পরা সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্ত আর্টসের ওযেবসাইটে।ভবিষ্যৎ রিসার্চের জন্য আর্কাইভের ব্যাপারে কথা চলছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির এশিয়ান কালচারের হেরিটেজের আর্কাইভ এবং ইউনিভার্সিটি অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের সাউথ এশিয়ান কালচারের হেরিটেজ আর্কাইভের সাথে ।
ব্রিটিশ বাংলাদেশী কালচারের হেরিটেজ বিষয়টি নির্বাচনের কারণ জানতে চাইলে শিল্পী বলেন বহু দিনের ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করবো। যে কাজে সবাই জানবে আমাদের সংস্কৃতি মোগল কিংবা ইংরেজের দানে পাওয়া নয়। আমাদের রয়েছে পাঁচহাজার বছরের অধিক পুরানো দোল উৎসবের ইতিহাস, সাড়ে সাতশ বছরের পুরাতন মঙ্গল কাব্যের ইতিহাস অথবা কয়েক হাজার বছরের পুরাতন নৌকা বাইচের ইতিহাস। ভাবুন তো সাড়ে সাতশো বছর পূর্বে একজন কানা হরিপদ দত্ত লিখছেন কয়েকশ ফিকশনাল চরিত্র নিয়ে নারী প্রধান কাব্য মনসা মঙ্গল। অথবা হাজার বছর আগেও রং বেরঙয়ের সারিগান গেয়ে নৌকা বাইচ হচ্ছে বাংলার খাল বিল নদী নালায়। আর দোল উৎসব তো জায়গা করে নিয়েছে বাংলা থেকে বলিউড অথবা ট্রাফালগার স্কোয়ার থেকে টাইম স্কয়ারে। সেই সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে সুর এবং তান যা আজও সমৃদ্ধ করছে আমাদের সংগীতকে। অথচ আমাদের নিজস্ব সম্পদ অনাদরে অযত্নে এবং চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতলে।
আজকের বাস্তবতায় ব্রিটেনে জন্ম এবং বেড়ে উঠা প্রজন্ম সহ গোটা বাংলায় তরুণরা ভুগছে এক ধরণের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে।তাঁদের চোখের সামনে অনেক নেতিবাচক ঘটনা ঘটছে যা তৈরী করছে ধোয়াঁশা। এমন ক্রান্তি কালে তরুণদের মানসিক নেতিবাচকতা দূর করতে এবং নিজস্ব পরিচিতর ভিত শক্ত করতে বাংলার হাজার বছরের নান্দনিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপন এবং চর্চা খুব জরুরি। নিজেদের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ইতিহাস,ঐতিহ্য, এবং শেকড়ের সন্ধানই দূর করতে পারে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের মতো ভয়াবহ মানসিক অবদমন এবং সামাজিক অবক্ষয়।
উল্লেখ্য গত বছর নভেম্বর মাসে আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড, লন্ডন বারা অফ টাওয়ার হ্যামলেট এবং লণ্ডন কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে এ সিজন অফ বাংলা ড্রামার অংশ হিসাবে ত্রিবেণী : দ্য রিদম অফ ওয়াটার শিরোনামে শিল্পী মুক্তা চক্রবর্তীর মাস ব্যাপী একক চিত্র কর্ম প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত চল্লিশটি চিত্র কর্ম শিল্পপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর জুন মাসে আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ডের সহযোগিতায় মুক্তা চক্রবর্তীর একক আর্টস প্রজেক্ট “স্টে এলাইভ উইথ ফাইন আর্টস’ অনলাইনে ঘরবন্দি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় লাইভ আর্টস সহ ভার্চুয়াল চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। এবছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনস্থ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজনে তিনশতাধিক প্রতিযোগীর অংশ গ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্বও পালন করেন চিত্র শিল্পী মুক্তা চক্রবর্তী।