যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল’প্রত্যয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসে চলছে ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’
হামিদ মোহাম্মদ
কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, সত্যবাণী
লন্ডনঃ ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর কবিতার প্রত্যয় নিয়ে এ সিজন অব ড্রামার ডিসমিস থিয়েটার গ্রুপের নাটক ‘ওয়ান্স ইন এ সঙ্গস’ সম্প্রতি মঞ্চস্থ হয়েছে।
গত ৮ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় কুইনমেরী ইউনির্ভাসিটির প্রিন্টার স্টুডিওতে মঞ্চস্থ হওয়া নাটকে অভিবাসী বাঙালি সমাজের নতুন প্রজন্মের সংকট ও সম্ভাবনা ছিল নাটকের মূল থিম।১৫ বছর বয়েসী এক তরুণীর স্বপ্ন ও পরিবারের টানাপোড়নের সংগ্রামী বৃত্তান্ত দৃশ্যমান হয় নাটকে।
৭ নভেম্বর মঞ্চস্থ হয় ফারাহ বি ওয়ানের ‘কাম ওয়াশ ইউর সিনস’ব্রাডি আটর্স সেন্টারে। নাটকের থিম ছিল বিশ্বে ক্রমাগত বেড়েচলা জেনোসাইড ও মানবিকতার লঙ্গনের প্রতিধ্বনি। ৬ নভেম্বর কুইমেরী ইউনির্ভাসিটির প্রিন্টার স্টুডিওতে মঞ্চস্থ হয় ‘ডোন্ট হোল্ড ব্যাক দি রিভার’। মঞ্চস্থ করে মিত্রাদয়া সংগঠন। ব্রিটেনে আসা বাংলাদেশী অভিবাসী জীবনের সংকট নিয়ে এই নাটক দর্শকদের মন কাড়ে।৯ নভেম্বর ব্রাডি আটর্স সেন্টারে মঞ্চস্থ হয়েছে অর্টিস্টিক সন্তানদের অবহেলা না-করে পরিচর্যার মাধ্যমে মূল ধারায় তাদের সৃজনশীল অবস্থান তৈরীর গল্প। মঞ্চস্থ করে ট্রিওআটর্স। নাটকের নাম‘ আশালতা’।
সাহিত্য ও ইতিহাস নির্ভর পূর্ণাঙ্গ নাটক উপহার দেন ড. মুকিদ চৌধুরীর পরিচালিত ‘দি বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার আটর্স’গ্রুপ।এই গ্রুপের ‘ওয়ারিওর’ বাংলায় ‘যোদ্ধা’ মঞ্চস্থ হয়েছে ১০ নভেম্বর ব্রাডি আটর্স সেন্টারে সন্ধ্যায়। ড. মুকিদ চৌধুরী লিখিত ‘ওয়ারিওর’ বাংলায় ‘যোদ্ধা’ নাটকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত কাহিনি ছিল ত্রিপুরা ও খোয়াই রাজ্যের অর্ন্তঘাত, বিশ্বাঘতকতার বিনির্মিত নতুন এক আখ্যান। বিশ্বরাজনীতি এবং বাংলাদেশের অর্ন্তঘাতমূলক রাজনীতির ছায়া প্রতিফলিত হয়েছে পুরো নাটকে। নাটকের ভাষা ও সংলাপ ত্রিপুরার রাজভাষা অনুসৃতÑযা সংস্কৃত ভাষার প্রভাবে অনেকটা যাত্রাপালার সংলাপকে মনে করে দিয়েছে। অভিনয় ছিল হৃদয়গ্রাহী ও উপভোগ্য।নাটক ছাড়াও ২ নভেম্বর ‘সেন্টার স্টেইজ’ উপস্থাপন করে ‘ইউজ ইওর ওয়ার্ডস।পরিবেশিত হয় কুইনমেরী ইউনিভার্সিটির প্রিন্টার স্টুডিওতে। কবিতা ও শব্দের ব্যবহার নিয়ে কথন ছিল পুরো অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রার একটি পরিবেশনা।
৩ নভেম্বর কুইনমেরী ইউনির্ভাসিটির পিন্টার স্টুডিওতে কবি শামীম আজাদ ও মি. মাইকের উপস্থাপনায় ‘ব্রিটিশ বাইলেঙ্গুয়াল পয়েট্রি কালেক্টিভ’র ‘ হোপ উইথ ট্যাগুর’ কাব্যপাঠ, সঙ্গীত, কবিতাচর্চা ও অনুবাদ ওয়ার্কসপ অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণ করেন বাঙালি, শ্বেতাঙ্গসহ আফ্রো-এশিয়ান সংস্কৃতিকর্মী, কবি ও লেখকবৃন্দ।৫ নভেম্বর ‘ডিভেইট: আর ফেয়ারী টেইলস লাইজ অর হোপ’ উপস্থাপন করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বুলবুল হাসান। বিতার্কিকদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠানটি কুইনমেরী ইউনির্ভাসিটির প্রিন্টার স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত হয়। সৃজনশীল এ পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শক ও শ্রোতাদের।
৯ ও ১০ নভেম্বর ছিল ‘সৌধ,সোসাইটি অব পয়েট্রি এন্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক’ পরিবেশিত পয়েট্রি নিয়ে দুটি উপস্থাপনা। ৯ নভেম্বর ‘ইন সার্চ অব দি সউল অব সিলভিয়া প্লাথ’ আধুনিক ইংরেজী সাহিত্য ও কবিতায় সিলভিয়া প্লাথের সৃষ্টি ও দর্শন সম্বলিত কাব্যপাঠ এবং মিউজিক। কবি টি এম কায়সারের উপস্থাপনায় উঠে আসে ইংরেজি সাহিত্যের বিশ্বমাত্রিকতা। আয়োজনটি ছিল বেথনালগ্রীনের রিসমিক্স থিয়েটার হলে। দ্বিতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় হ্যানবারী স্ট্রিটের কবি নজরুল সেন্টারে। বিষয় ছিল ‘রি-রিডিং লোরকা, নজরুল এন্ড হিকমত’। বিশ্বমাত্রিক এই তিন কবির সৃষ্টি নিয়ে কথা ও পাঠ বোদ্ধা শ্রোতাদের উপস্থিতিতে ছিল মনোগ্রাহী।
উল্লেখ্য, এবারের মঞ্চায়িত ‘ওয়ারিওর বা যোদ্ধা’ ছাড়া মঞ্চস্থ নাটক ও কবিতাপাঠসহ অনুষ্ঠানগুলোর বৈশিষ্ট ছিল দ্বি-ভাষিক। ইংরেজি ও বাংলা বা বাইলেঙ্গুয়েল হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অভিনয় ও দর্শক সারিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বাঙালি অভিবাসন ও বাংলা এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ব্রিটিশ-বাঙালিদের মনোযোগ লক্ষ্য করার মতো ছিল। মূলধারার শ্বেতাঙ্গসহ অন্যান্য আফ্রো-ক্যারভিয়ান ও এশিয়ান দর্শকের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে এবারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকটি নাটকেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দর্শনীর বিনিময়ে অনুষ্ঠিত নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় বাঙালিসহ মূলধারা এবং আফ্রো-এশীয় সংস্কৃতি বোদ্ধাদের অংশগ্রহণ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল একটি আশাজাগানিয়া সৃজনশীল ধারা তৈরী করার কৃতিত্বের দাবীদার বলে মন্তব্য করেছেন নাটক ও অনুষ্ঠান দেখতে আসা গুণীজন।