যেই লাউ সেই কদু সিসিকের হকার পুনর্বাসন কর্মসূচি ভেস্তে যাচ্ছে
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ২ বছর আগে ব্যাপক আয়োজন আর ঢাকঢোল পিটিয়ে সিলেট নগরিতে হকারদের পুণর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। ২০২০ সালের শেষের দিকে নগর ভবনের পেছনের লালদিঘিরপাড় মাঠে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে হকারদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়ালেও প্রায় ২ বছরের মাথায় সেই হকাররা আবারও নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। সচেতন মহলের অনেকেই সিসিকের হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে ‘যেই লাউ সেই কদু’ হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন।সরেজমিনে লালদিঘিরপাড়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সহস্রাধিক হকারের পূনর্বাসনের জন্য বরাদ্দকৃত মাঠে হাতেগোনা কয়েকজন হকার আছেন আর বাকী হকাররা আগের মতোই নগরের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন নির্বিঘেœ। হকারদের পূনর্বাসনের মাঠের সম্মুখ দিকের কিছু দোকান ছাড়া পেছনের পুরো মাঠই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।লালদীঘিরপাড় মাঠের সবজি বিক্রেতা জয়নাল মিয়া বলেন, প্রথমদিকে এখানে প্রচুর মানুষজন কেনাকাটা করতে আসতো আর আমাদেরও ভালো আয় হতো। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে এখানে ক্রেতার সংখ্যা কমছে এবং এখানকার বিক্রেতারা আবারও গিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে নগরির বিভিন্ন সড়ক যেমন বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, তালতলা, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়ক হকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কোথাও এ সকল সড়কের দু’পাশের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তারা দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে নগরিতে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ব্যহত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক জীবন।নগরির জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী মিজান মাহমুদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আগে জিন্দাবাজারে ট্রাফিক জ্যাম লাগলে ২/৩ মিনিটে তা সমাধান হয়ে যেত। সড়ক ও ফুটপাত হকারদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ায় এ সকল রাস্তায় কোন কোন সময় ট্রাফিক জ্যাম প্রায় আধ ঘন্টা পর্যন্তও থাকে।অপরদিকে সিসিকের হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও স্থান নির্বাচনে নগর কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল। আলাপকালে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের হকার উচ্ছেদ বেশিরভাগ সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হকারদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাটি তাদের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ছিলনা। হকারদের জন্য নির্মিত হকারশ্যাডগুলোও মানসম্মত ছিলোনা। এখানে সিটি কর্পোরেশন যে অর্থ ব্যয় করেছিলো তা জলে গেছে। এই হকার পুনর্বাসন ‘যেই লাউ সেই কদু’ বলেও মনে করেন তিনি।
হকার পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আগে আমি যখন নগরির রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ করতাম তখন মানুষজন এই হকারদের পুনর্বাসনের দাবি তুলেছিলেন। পরবর্তীতে সিসিকের পক্ষ থেকে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেও তারা সেখানে কয়েকদিন বসে এখন ব্যবসা করতে নারাজ। আর এই সমস্যাটি আমার একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে নগরের বাসিন্দাদেরকেও সচেতন হতে হবে। তারা হকারদের কাছ থেকে কেনাকাটা করেন বলেই তো হকাররাও বসার সুযোগ পায়।