সাতই মার্চের ভাষণে কী ছিলো? বোঝো নাই?
লুৎফর রহমান রিটন
সাতই মার্চের ভাষণে কী ছিলো? বোঝো নাই?
কোনোদিন তার গুঢ় অর্থটা খোঁজো নাই।
বাঙালি জাতির ‘মুজিবরই প্রাণ ভোমরা’
বাঙালি জাতিকে বলেছেন তিনি–‘তোমরা’।
তাঁর ‘তুমি’ বলা ছিলো যে স্বতঃস্ফূর্ত
সম্বোধনেই অধিকার ছিলো মূর্ত।
কী মানানসই অভিভাবকের আসনে!
প্রমাণিত সেটা সাতই মার্চের ভাষণে।
তিনি পিতারূপী সন্তানদের ভূমিতে
কতো অনায়াসে নেমে এসেছেন ‘তুমি’তে!
বঙ্গবন্ধু কথা বলতেন যেভাবে
আর কোনো নেতা সাহস করেনি সেভাবে।
প্রমিতের ধার ধারেন নি তাঁর ভাষাতে
ইনশাল্লাহ্র ব্যবহারও ছিলো, আশাতে।
ইয়াহিয়াদের হুংকার পায়ে দলেছেন–
‘দাবায়া রাখতে পারবা না’–তিনি বলেছেন,
‘গুলি চালাবার চেষ্টা করো না’ বক্ষে
‘ভাতে ও পানিতে মারবো’, পাবে না রক্ষে।
বাঙালিকে তিনি বলেছেন–থাকো তৈরি
প্রতিরোধ করো সময় এখন বৈরি–
বলেছেন তিনি জীবনের মায়া ভুলিতে।
‘প্রত্যেক ঘরে দুর্গ গড়িয়া তুলিতে’।
বাঙালি জাতিকে বলেছেন–‘ট্যাক্স বন্ধ’
জানা ছিলো তাঁর হুকুম দেবার ছন্দ।
তাঁর এক ডাকে জেগে উঠেছিলো বাংলা–
ফসলের মাঠ কিষাণীর লাউ-জাংলা
ফুঁসে উঠেছিলো, তিনি ডাক দেয়া মাত্র
কৃষক-শ্রমিক-লেখক-শিল্পী-ছাত্র
হাওড়-বাওড় রাজপথ কানাগলিতে
ছিলো উন্মুখ ‘জয় বাংলা’টা বলিতে।
সাতই মার্চের ভাষণে কী ছিলো? বোঝো নাই?
কোনোদিন তার গুঢ় অর্থটা খোঁজো নাই।
বজ্রকণ্ঠে তর্জনী তুলে উচ্চে
যেনো রূপকথা! নিটোল শব্দগুচ্ছে!
ভাষণটা ছিলো রুখে দাঁড়াবার-যুক্তির।
ঘোষণাটা ছিলো স্বাধীনতা আর মুক্তির।
ইয়াহিয়াদের অবিচার ষড়যন্ত্র–
এক ভাষণেই ছিলো যে মুক্তিমন্ত্র।
নির্দেশনাটা ছিলো যে মুক্তিযুদ্ধের
বাংলা-বাঙালি-পরিচয় পরিশুদ্ধের।
ভাষণটা ছিলো সমুদ্রসম প্রেরণা
মাতৃভূমির শত্রুকে তুমি ছেড়ো না।
‘রক্ত দিয়েছি দিতে হবে আরো রক্ত’
বাঙালি জাতিকে পরাজিত করা শক্ত।
একটি ভাষণে ‘চার মূলনীতি’-‘লক্ষ্য’
চিহ্নিত ছিলো দুশমন ‘প্রতিপক্ষ’।
কবিতার মতো ছন্দ-চিত্রকল্প
চিরবঞ্চিত বাঙালির চেনা গল্প।
একটি ভাষণে হতবাক পুরো বিশ্ব
ঝলসে উঠেছে কী যে অপরূপ দৃশ্য!
সাড়ে সাতকোটি বাঙালির তিনি সৌরভ
হাজার বছরে অনন্য এক গৌরব।
বাংলা-বাঙালি পেয়েছে পরম মিত্র
আলাদা পতাকা মুদ্রা ও মানচিত্র…..
অটোয়া ০৫ মার্চ ২০২১
(লেখক: দুই বাংলার কিংবদন্তী ছড়াকার)