সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট মেরামতে সেনাবাহিনী
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট মেরামতের জন্য সিলেটে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ৪টি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট মেরামতে তারা কাজ শুরু করেছেন। এদিকে, এ দু’ জেলার আরো ৩টি উপজেলায় নিজেদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে সেনাবাহিনী। এ নিয়ে এই দু’ জেলার ২৩টি উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা হলো। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে আরো ৩১৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে মঙ্গলবার একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, গোলাপগঞ্জে মঙ্গলবার ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক।১৭ পদাতিক ডিভিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে উভয় জেলার অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি অনুধাবন করে সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগে কয়েকটি রাস্তা সচল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে দু’জেলার ৪টি রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। রাস্তাগুলো হচ্ছে. সিলেটের দরবস্ত-কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ সদর-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর-জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর-দিরাই রাস্তা। গত ২৭জুন থেকে তারা রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হক, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি মঙ্গলবার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় অবস্থিত সেনা ক্যাম্প দু’টি পরিদর্শন এবং এ দু’টি এলাকার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ১৭জুন হতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানের দিক নির্দেশনায় ১৭ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ২০টি উপজেলায় মোতায়েন রয়েছে। তারা সর্বমোট ২৫টি উপজেলায় নিরলসভাবে অসংখ্য পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও তাদের মাঝে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করছে। ২৮জুন হতে সেনাবাহিনী সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় নতুনভাবে ক্যাম্প স্থাপন এবং সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি উভয় জেলার দুর্গম এলাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিপন্ন রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সেনাবাহিনী বিভিন্ন মাধ্যম হতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, খাবার পানি সরবরাহ, বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রম, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট সংস্কার, বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখাসহ সকল ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে।পানিতে ডুবে কমলগঞ্জে শিশুর মৃত্যু সিলেট বিভাগে বন্যার পানিতে ডুবে আরো এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে তামিম আহমদ নামের ৭ বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে পানিতে ডুবে মোট ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩১৯ সিলেট বিভাগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আরো ৩১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৫৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে সিলেটে ৪৩ জন, হবিগঞ্জে ৭৫ জন ও মৌলভীবাজারে ৪৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার পর থেকে এ পর্যন্ত এ বিভাগে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫,০৫৩ জন বলে জানিয়েছে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ।জেলা প্রশাসকের ত্রাণ বিতরণ গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা শাহী ঈদগাহ বাজারে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০০ জন ক্ষতিগ্রস্তের মাঝে ত্রাণ ও শিশুখাদ্য বিতরণ করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান। পরে শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর এসইএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৫টি পরিবারের ১৯৫ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিলেট জেলার বন্যা কবলিত কেউ অভূক্ত থাকবে না, আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা রয়েছে। বন্যা কবলিতদের নিয়মিত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরি করছে। এ তালিকার উপর ভিত্তি করে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করা হবে। পরে তিনি নৌকায় করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সমগ্র এলাকা ঘুরে দেখেন।