সিলেটের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে চরম বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
সিলেট: নানা অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা। চুরি-ছিনতাই, হামলা-সংঘর্ষ, এমনকি খুনোখুনিতেও জড়াচ্ছে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। সিলেট নগরির প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে বা রাস্তার মোড়ে-মোড়ে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের বেপরোয়া আচরণে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের রাজনৈতিক দলের নেতারাও ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে দিন দিন তারা চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠছে।
অভিযোগ রয়েছে- চুরি-ছিনতাইয়ের জন্য নগরের বিভিন্ন স্থানে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা ওৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা পথচারীদের আটকে ছুরি ধরে ছিনতাই করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত দু’দিনে ছিনতাইর অভিযোগে কিশোরগ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরিতে অর্ধশত কিশোরগ্যাং রয়েছে। বিভিন্ন পাড়া ও এলাকাভিত্তিক এসব গ্যাংয়ের কার্যক্রম। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মদদে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে নেতারা এসব কিশোরদের ব্যবহার করে থাকেন বলেই তাদের অপরাধ কর্মকান্ডেও সায় দিয়ে থাকেন তারা। এতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনায় হামলা-সংঘর্ষে জড়াতে পিছ্পা হয় না।
নগরির আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, শাহী ঈদগাহ, টিবি গেইট, বালুচর, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, উপশহর, তেররতন, মাছিমপুর, মেন্দিবাগ, তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কুয়ারপাড়, লামাবাজার, কানিশাইল, শামীমাবাদ, মদিনামার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার ও দর্শনদেউড়ি, দক্ষিণ সুরমার কদমতলি, স্টেশন রোড, টার্মিনাল রোড ঝালোপাড়া, খোজারখলা, ভার্থখলা, সাধুরবাজার, টেকনিক্যাল রোড, বঙ্গবীর রোড, বারখলা, চন্ডিপুলসহ বিভিন্ন স্থানে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিয়ে থাকে। বিকেল হলেই তারা নির্দিষ্ট স্থানে আড্ডা বসায়। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার মদদ থাকায় ভয়ে কেউ তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদের সাহস করে না।
গত ২৬ জুন নগরের টিলাগড় ও পূর্ব শাপলাবাগে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও যুবলীগ নেতা শমসের আলীর বাসায় হামলা চালায় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা। ওই হামলায়ও কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য জড়িত ছিল। এরআগে কিশোরগ্যাংয়ের অন্তর্দ্বন্দ্বে নগরির টিবি গেইট, খাদিম ও মেন্দিবাগে ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। গত এক বছরে বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে অন্ততঃ অর্ধশত হামলা, পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
হামলা-সংঘর্ষ ছাড়াও ছিনতাইর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। নগরির বিভিন্ন সড়কের ফাঁকা নির্জন জায়গায় গ্যাংয়ের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে পথচারী ও রিকশা আরোহীদের পথরোধ করে ছোরা ধরে ছিনতাই করছে তারা। গত সোমবার ভোর ৫টার দিকে নগরির কিনব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন গোয়াইনঘাট উপজেলার গুরকুচি দ্বারিখাই গ্রামের মো. আজিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল আহাদ ও তার চাচাতো ভাই আলী আহমদ। ছোরা ধরে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
এ সময় তাদের চিৎকারে পথচারীরা জড়ো হয়ে এক ছিনতাইকারীকে আটক করলেও দু’জন পালিয়ে যায়। পরে ধৃত ছিনতাইকারীর দেয়া তথ্যমতে শাহজালাল ব্রিজের দক্ষিণপ্রান্ত থেকে অপর ২ ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়। আটককৃত ৩ জনই কিশোরগ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গেছে। এর আগের দিন রোববার ভোরে কাজিরবাজার ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে ছিনতাইর শিকার হন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী। এ ঘটনায়ও পুলিশ কিশোরগ্যাংয়ের ২ সদস্যকে আটক করে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের কর্মকান্ডে ব্যবহার করেন। তাদেরকে বিভিন্ন নেতারা মিছিল-সমাবেশে নিয়ে যান। এরা নগরির বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেয়। তবে কোথাও খারাপ আড্ডার খবর পেলে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেয়।